মায়ের ভাষার জন্য বিশ্বের বুকে রক্ত ও প্রাণদানের এক অনন্য ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশ। পলাশ-শিমুল ফোটার দিনে তাই তো আজ গেয়ে উঠছে মন- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?’ আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। গৌরবোজ্জ্বল ভাষা আন্দোলনের আজ ৭৩ বছর পূর্ণ হয়েছে।
দিনটি পালনে এবার দেখা যাবে ভিন্নমাত্রা। ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। সরকারপ্রধান ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ তার মন্ত্রিপরিষদের অধিকাংশ সদস্যই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। গত ১৫ বছর দলটির নেতৃত্বে থাকা সরকার ও ঘনিষ্ঠদের দিবসটি পালনে যে করায়ত্তবাদী তৎপরতা দেখা যেত। এবার সে চিত্রের দেখা মিলবে না। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তখন কর্মসূচি পালন করতে পারলেও, বারবার নানা বাধার সম্মুখীন হতো। আওয়ামী লীগ ও তার জোটসঙ্গী ছাড়া প্রায় প্রতিটি দলই এবার সুষ্ঠুভাবে দিনটি পালন করবে।
রীতি অনুযায়ী রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং পরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে বিদেশি কূটনীতিক, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ভাষাসৈনিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা জানান।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার রাজপথ, দেয়াল বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। চারুকলার শিক্ষার্থীরা রাত-দিন খেটে রংতুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রতিবাদের নানা ভাষা। শহীদ মিনার বেদি, কালো রাজপথ, দেয়াল হেসে উঠছে বর্ণিল আল্পনায়।
এদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে ঘিরে রাজধানীতে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। র্যাব, পুলিশ, এপিবিএন, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা (ইউনেসকো) ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কয়েক বছর ধরে দিবসটি পালিত হচ্ছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ায় এবং পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকার ছাত্র ও সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস থেকে ১৪৪ ধারা ভেঙে ছাত্রছাত্রীরা মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ কয়েকজন।
দিনটি উপলক্ষে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করবে। আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ, কোরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষাশহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা শহরের সড়কদ্বীপ ও গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাজনক স্থানে বাংলাসহ অন্যান্য ভাষার বর্ণমালা-সংবলিত ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে।







