১৩২ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটি গঠন হয়েছে। সমিতির নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রথম মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করা অ্যাডভোকেট মকবুল কাদের চৌধুরীকে ‘সর্বসম্মতিক্রমে’ ঘোষিত ৫ সদস্যের এ কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে । বাকি চার সদস্য হলেন— শামসুল আলম, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, জহুরুল আলম ও রফিক আহাম্মদ।
এদের মধ্যে মকবুল কাদের চৌধুরী, জহুরুল আলম ও রফিক আহাম্মদ বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের। বাকি দুজন শামসুল আলম ও সৈয়দ আনোয়ার হোসেন জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত বাংলাদেশ ল’ ইয়ার্স কাউন্সিলের সমর্থক।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত জেলা আইনজীবী সমিতির অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় এ কমিটি গঠন করা হয়। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে এ কমিটি নির্বাচন আয়োজন করার কথা রয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমাদের কমিটির মেয়াদ শেষ এবং সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাধারণ সভা ডেকে অ্যাডভোকেট মকবুল কাদের চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে বাকি ৪ জনকে সদস্য করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা অফিসিয়ালি আগামীকাল (সোমবার) তাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবো।’
সমিতির সদ্য বিদায়ী সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘দুপুর আড়াইটা থেকে আমাদের সভা শুরু হয়েছে। এতে ৫ শতাধিক আইনজীবী অংশ নিয়েছেন। অ্যাডহক কমিটি আগামী ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করবেন।’
১৩২ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম অ্যাডহক কমিটির পথে হেঁটেছে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের মাত্র ৬ দিন আগে মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ পূর্ণ কমিশন পদত্যাগ করলে অ্যাডহক কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠনের জন্য সভা আহ্বান করা হয়। রবিবার অনুষ্ঠিত এ সভা অনানুষ্ঠানিকভাবে বয়কট করে আওয়ামী পন্থি আইনজীবীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামীপন্থী একাধিক আইনজীবী বিষয়টি সিভয়েস২৪’কে জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আইনজীবী বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের জন্য প্রথম ঘোষিত নির্বাচন কমিশনে মকবুল কাদের চৌধুরী ছিলেন মূখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা। পরে তিনি পদত্যাগ করেন। আজকের অ্যাডহক কমিটিতে উনিই আহ্বায়ক এবং সানন্দে পদটি গ্রহণ করেছেন বলে মনে হচ্ছে।’
আওয়ামী সমর্থিত ‘সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ’ থেকে সভাপতি প্রার্থী মো. আবদুর রশীদ লোকমান বলেন, ‘আমাদের সিনিয়র আইনজীবীরা মামলার আসামি হওয়ায় তারা সভায় উপস্থিত হতে পারছেন না। আবার নির্বাচনের কয়েকদিন আগে পণ্ড হয়ে যাওয়ায় সমিতির সদস্য অনেকেই মনমরা। বেশিরভাগই এটি ভালোভাবে নেয়নি। অনেকেই নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছেন।’
অ্যাডহক কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটির বিষয়ে আমাদের মত-দ্বিমত নেই। নির্বাচন যেহেতু বাতিল হয়েছে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অ্যাডহক কমিটি গঠন হয়েছে। তারা যদি ৬০ দিনের মধ্যে সুষ্ঠ নির্বাচন দিতে পারে আমরাও সেটিকে স্বাগত জানাবো।’
গত ১০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। নির্বাচন উপলক্ষে গেল বছরের ৩০ ডিসেম্বর পথম দফায় নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ওই ইলেকশন কমিশন বাতিল করে ফের চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন গঠন করে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটি। নির্বাচনে ২১টি পদের জন্য ৪০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল। ভোটাধিকার প্রয়োগের কথা ছিল মোট ৫ হাজার ৪০৪ আইনজীবীর।
এবারের পণ্ড হওয়া নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি সমর্থিত বাংলাদেশ ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল যৌথভাবে আইনজীবী ঐক্য পরিষদ নামে যৌথ প্যানেল ঘোষণা করেছিল। অপরদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ প্যানেল ঘোষণা করে প্রচারণায় নেমেছিল। তবে কৌশল করে এবার প্যানেলের নাম রাখা হয়েছিল ‘রশিদ-জাবেদ-মাহতাব পরিষদ’।







