- এখন আপিল বিভাগে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে গ্রামীণ কল্যাণ।
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ কল্যাণকে ১১৯ কোটি টাকা আয়কর পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ২০১১-১২ থেকে পরবর্তী সাত করবর্ষের জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে এই আয়কর দিতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দাবি নিয়ে আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গ্রামীণ কল্যাণের করা সাতটি আবেদন খারিজ করে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে গ্রামীণ কল্যাণের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী সরদার জিন্নাত আলী, অ্যাডভোকেট মো. উম্বর আলী ও অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা ও তাদের সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তাহমিনা আক্তার পলি।
তবে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
গ্রামীণ এলাকায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে ১৯৯৬ সালে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের দেয়া তথ্য অনুসারে, ২০১১ থেকে ২০১৬-১৭ সাত করবর্ষে গ্রামীণ কল্যাণের কাছে ২৫ কোটি ৫৯ লাখ ১৫ হাজার ২২৫ টাকা আয়কর দাবি করে নোটিশ দেয় এনবিআর। এ দাবির বিরুদ্ধে উপকর কমিশনারের দপ্তরে আবেদন করলে সেখানে খারিজ হয় গ্রামীণ কল্যাণের আবেদন। পরে উপকর কমিশনারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করে গ্রামীণ কল্যাণ। ২০১৫ সালে চারটি, ২০১৬ সালে একটি ও ২০১৮ সালে তিনটি আপিল করা হয়।
ট্রাইব্যুনালে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ১২০ ধারা অনুসারে গ্রামীণ কল্যাণের নথি পুনর্মূল্যায়ন চায় এনবিআর। শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল এনবিআরকে সে অনুমতি দিলে গ্রামীণ কল্যাণের আয়কর নথি পর্যালোচনা পুনর্মূল্যায়ন করে। তখন এই সাত করবর্ষে গ্রামীণ কল্যাণের কাছে এনবিআর ৫৫৫ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৬২৪ টাকা আয়কর দাবি করে। আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনালও এ দাবি বহাল রাখেন। পরে আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে সাতটি রেফারেন্স মামলা করে গ্রামীণ টেলিকম। চূড়ান্ত শুনানির পর গ্রামীণ কল্যাণের রেফারেন্স মামলা খারিজ করে বৃহস্পতিবার এ রায় দিল উচ্চ আদালত।
এর আগে হাইকোর্টে ২০১৫ সালে চারটি, ২০১৬ সালে একটি, ২০১৮ সালে দুটিসহ গ্রামীণ কল্যাণ পৃথক সাতটি আবেদন (আয়কর রেফারেন্স) করে।
রায়ের ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ড. ইউনূসের সাতটি রেফারেন্স মামলা শুনানির পর হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে সাত করবর্ষের আয়কর বাবদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ১১৯ কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ১৯০ টাকা টাকা দিতে হবে।’
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তাহমিনা পলি বলেন, ‘আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের পর ছয়টি করবর্ষের বিপরীতে গ্রামীণ কল্যাণের কাছে এনবিআরের দাবি ছিল ৫৫৫ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৬২৪ টাকা। এই দাবির বিপরীতে বিভিন্ন সময়ে ৪৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৪ টাকা পরিশোধ করেছে গ্রামীণ কল্যাণ।
‘এ হিসাবে গ্রামীণ কল্যাণের কাছে এনবিআরের আয়কর বাবদ দাবির বাকি ১১৯ কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ১৯০ টাকা পাওনা। রেফারেন্স আবেদনগুলো খারিজ হওয়ায় গ্রামীণ কল্যাণকে অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করতে হবে।’
গ্রামীণ কল্যাণের আইনজীবী সরদার জিন্নাত আলী বলেন, ‘গ্রামীণ কল্যাণের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’