দগ্ধ রোগীর ক্ষত বাড়াচ্ছে ভুল চিকিৎসা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেকে) বার্ন ইউনিটে ২য় তলার বারান্দায় বিষন্ন মনে দাঁড়িয়ে আছেন মতিহার মিয়া। বারান্দায় দাঁড়িয়েই তার সঙ্গে কথা বলেন দেশ রূপান্তরের এই প্রতিবেদক। মতিহার মিয়ার বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ।

মতিহার মিয়া বলেন, ‘প্রায় দুই মাস হলো ছেলে আকিফ আগুনে দগ্ধ হয়, তার শরীরের ৩০ ভাগ পুড়ে গেছে। আকিফকে আমার মা প্রথমে ক্ষত জায়গায় টুথপেস্ট লাগিয়ে দেন। এখন সেখানে ইনফেকশন হয়েছে বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন। টুথপেস্ট না লাগিয়ে সঙ্গে সঙ্গে যদি ডাক্তার দেখানো যেত তাহলে আমার ছেলেটার এ অবস্থা হতো না।’

তিনি বলেন, ‘প্রথমে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি করাই, সেখানে ১৫ দিন চিকিৎসা শেষে আকিফকে নিয়ে শিশু হাসপাতালে ভর্তি হই। সেখানে আরও ১৮-২০ দিন ভর্তি ছিলাম, এরপর ঢামেকে আসি। ডাক্তাররা বুধবার অপারেশন করবেন। আকিফের গাল, গলা ও হাত বেশি পুড়েছে।’

একই হাসপাতালে কথা হয় নরসিংদীর বাসিন্দা জয়দেব রায়ের সঙ্গে। তার শিশু মেয়ে ফাল্গুনী রায় এক সপ্তাহ আগে ঝলসে গেছে রান্না করা গরম ডালে। জয়দেব রায় বলেন, ‘গরম ডাল টেবিল থেকে ফাল্গুনীর ওপরে পড়ে গিয়ে মাথা, মুখ ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ঝলসে যায়। এরপর আমার স্ত্রী এক প্রতিবেশীর পরামর্শে তার গায়ে গোবর লাগিয়ে দেন, এতে আরও সমস্যা তৈরি হয়েছে।’

ঢামেকের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মো. আশিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় চলতি শীত মৌসুমে তিন গুণের মতো বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে, যার মধ্যে শিশুরাই বেশি। পুড়ে যাওয়া রোগীদের মধ্যে যারা শিক্ষিত ও সচেতন নয়, তারা তেল, ডিম ও পেস্ট লাগিয়ে নিজেরাই চিকিৎসা করায়। হিন্দুদের মধ্যে ক্ষতস্থানে সিঁদুর লাগানোর প্রবণতা রয়েছে, যারা কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন তারা গোবর লাগিয়ে দেন। এসব কারণে ইনফেকশন দেখা দেয়।’

এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘পোড়া রোগীর চিকিৎসা কিন্তু সাধারণ চিকিৎসার মতো নয়। কেউ পুড়ে গেলে তাকে প্লাস্টিক সার্জন কিংবা বার্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, অন্য বিভাগের চিকিৎসক দেখানো হয় এবং তারা সমস্যা শনাক্ত না করে চিকিৎসা শুরু করেন। যখন সমস্যা বেড়ে যায় তখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় রোগীকে। এতে রোগীদের জটিলতা বেড়ে যায়।’

হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগুনে পোড়া রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে ভুল ধারণা আছে তাদের মধ্যে। অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে আগুনে পোড়া, দগ্ধ হওয়া কিংবা তরল পদার্থে ঝলসে যাওয়া অংশে চুন, টুথপেস্ট, ডিম লাগানো হয়েছে যা থেকে ইনফেকশন হয়েছে। যা এই রোগীদের চিকিৎসা আরও দীর্ঘায়িত করছে।

ডাক্তাররা আগুনে পোড়া রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে পানি ছাড়া অন্য কিছু ব্যবহার করতে নিষেধ করছেন।