দেশের অর্থনীতি স্বনির্ভর এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে অবদান রাখতে সবাইকে রাষ্ট্রের প্রাপ্য রাজস্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউর মেজবান হলে ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষ্যে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, চট্টগ্রাম আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহবান জানান মেয়র।
কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কমিশনার শওকত আলী সাদীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কাস্টমস, এক্সাইজ ও মূল্য সংযোজন কর আপিল ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ লুৎফর রহমান, কর অঞ্চল-১ এর কমিশনার মো. আবুল কালাম আজাদ, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট (আপিল) কমিশনারেট কমিশনার মো. ফজলুল হক ও কাস্টমস হাউস কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিন।
মেয়র বলেন, বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৯১ সালে ভ্যাট চালু হয়। আজ তিন দশক পর দেখা যায়, সেই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রাজস্ব খাতকে যে শক্ত ভিত্তি দিয়েছে, তা এখন জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট কর আদায়ের প্রায় ৩৮ শতাংশই আসে ভ্যাট থেকে, যা একক সূত্র হিসেবে সর্বোচ্চ রাজস্ব অবদান। শুধু তাই নয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে ভ্যাটই এখন সরকারের উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক হাতিয়ার।
“ভ্যাটের এই শক্তিশালী অবদান প্রমাণ করে যে ১৯৯১ সালে নেওয়া নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল সময়োপযোগী ও দূরদর্শী। রাজনৈতিক মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রের কল্যাণে যেসব পদক্ষেপ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উপকৃত করে, সেগুলো মূল্যায়ন করা আমাদের দায়িত্ব। ভ্যাটের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও ডিজিটালাইজেশন আজ দেশকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিএনপি সরকারের আমলে প্রবর্তিত ভ্যাট ব্যবস্থা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে টেকসই করেছে, রাজস্ব প্রশাসনকে আধুনিক করেছে এবং উন্নয়ন কার্যক্রমকে দীর্ঘমেয়াদে স্থায়িত্ব দিয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দল-মত নির্বিশেষে এই ধরনের ইতিবাচক উদ্যোগগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন।
সবাইকে রাষ্ট্রের প্রাপ্য রাজস্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, ভ্যাট থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব সরকারের আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস, যা স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সমাজকল্যাণ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জাতীয় ঋণ পরিশোধের মতো বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা ও বিনিয়োগে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে রাজস্ব অবদান রাখে।
তিনি নাগরিকদের প্রতি পণ্য ও সেবা গ্রহণের সময় ভ্যাট চালান নেওয়ার অনুরোধ করেন। ভ্যাট আহরণের ক্ষেত্রে তিনি ভ্যাট কর্মকর্তাদের দেশপ্রেমিক হিসেবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
এবারের ভ্যাট দিবসের স্লোগান হচ্ছে ‘সময়মত নিবন্ধন নিব, সঠিকভাবে ভ্যাট দিব।’ সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমি, চট্টগ্রামের মহাপরিচালক ড. আবু নূর রাশেদ আহম্মেদ।
স্বাগত বক্তব্যে চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মো. মাহফুজুল হক ভূঁঞা ভ্যাট ব্যবস্থার আধুনিকায়নের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করেন। কর জিডিপির অনুপাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কর জিডিপির অনুপাত ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা সন্তোষজনক নয়। এখান থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের সভাপতি বলেন, ভ্যাট একটি পরোক্ষ কর ব্যবস্থা। একটি আধুনিক, স্বচ্ছ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করতে হলে ভ্যাট প্রদানের বিকল্প নেই। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে ভ্যাট ব্যবস্থার প্রবর্তন হলেও ২০১১ সাল থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়মিত ভ্যাট দিবস পালন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, চট্টগ্রাম প্রতি বছরের মতো এ বছর ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ পালন করছে।
অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন, দাখিলপত্র প্রদান, কর পরিশোধসহ বিভিন্ন সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্যে সপ্তাহব্যাপী শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটে বুথ স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন পোস্টার, ব্যানার, মোবাইল এসএমএস ইত্যাদির মাধ্যমে করদাতাদের অধিকতর সচেতন করা হচ্ছে। বিভিন্ন সার্কেল অফিসে করদাতাদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি জানান, গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ‘মান্থ অব রেজিস্ট্রেশন’ ঘোষণা করে। এ ঘোষণার প্রেক্ষিতে ভ্যাট নিবন্ধন প্রদানে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট প্রথম স্থান অর্জন করে। এ সময় ৭ হাজার অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন প্রদান করা হয়। শুধু নিবন্ধন গ্রহণ করা নয় নিবন্ধন গ্রহণের পরবর্তী মাস থেকে রিটার্ন দাখিলের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের যথাযথ ভ্যাট পরিশোধ করতে আহ্বান জানান।







