অবশেষে দিল্লি বিস্ফোরণকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বললো ভারত সরকার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ::

 

ভারতের দিল্লি শহরের লাল কেল্লার কাছে ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণকে অবশেষে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। বুধবার (১২ নভেম্বর) মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

 

ভারতের কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, সোমবার (১০ নভেম্বর) লাল কেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির হাতে সংঘটিত এক নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার সাক্ষী হয়েছে।

 

 

বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভার কমিটির (সিসিএস) বৈঠক শেষে পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন। এরপরই মন্ত্রিসভার এই প্রস্তাব গৃহীত হয়।

 

অশ্বিনী বৈষ্ণব আরও বলেন, মন্ত্রিসভা নির্দেশ দিয়েছে যে এই ঘটনার তদন্ত সর্বোচ্চ জরুরি ভিত্তিতে ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে, যাতে অপরাধীরা, তাদের সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষকরা দ্রুত শনাক্ত হয় এবং ন্যায়ের মুখোমুখি হতে পারে।

 

তিনি জানান, মন্ত্রিসভা এই ‘নৃশংস ও কাপুরুষোচিত’ হামলাকে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের ‘শূন্যসহিষ্ণুতা নীতি’ পুনর্ব্যক্ত করেছে।

 

বৈষ্ণব বলেন, এই হামলায় নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। মন্ত্রিসভা ভারতের অটল অঙ্গীকার পুনরায় জানাচ্ছে যে, কোনো রূপে ও প্রকাশে সন্ত্রাসবাদের প্রতি শূন্য সহিষ্ণুতা বজায় থাকবে। পাশাপাশি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া সংহতি ও সমর্থনের বার্তার জন্য সরকার কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে।

 

এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভুটান সফর শেষে দেশে ফিরে সরাসরি দিল্লির লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ (এলএনজেপি) হাসপাতালে যান, যেখানে তিনি বিস্ফোরণে আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তাদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেন এবং দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।

 

হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহতদের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যগত আপডেট উপস্থাপন করেন।

 

সোমবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দিল্লির লাল কেল্লার কাছাকাছি ওই মেট্রো স্টেশনের কাছে একটি হুন্ডাই আই২০ গাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে অন্তত ১২ জন নিহত ও ২০ জনের বেশি আহত হন।

 

প্রাথমিক ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের দেহে একাধিক ভাঙন ও মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় তাদের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন ফুসফুস, কানের পর্দা ও পেটের অঙ্গগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকের শরীরে গভীর ক্ষত ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের চিহ্নও পাওয়া গেছে, যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, বিস্ফোরণের শক্তি তাদের দেয়াল বা কঠিন বস্তুর সঙ্গে আছড়ে ফেলেছিল।

 

ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মরদেহ বা পোশাকে কোনো স্প্লিন্টার (ধাতব টুকরো) পাওয়া যায়নি। ব্যবহৃত বিস্ফোরকের ধরন পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণের পর নিশ্চিত করা হবে। আহতদের বেশিরভাগ আঘাত ছিল মাথা, বুক ও শরীরের ওপরের অংশে।

 

বুধবার (১২ নভেম্বর) ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির (এফএসএল) কর্মকর্তারা ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন ড. উমর উন নাবির মায়ের কাছ থেকে, যিনি ধারণা করা হচ্ছে ওই বিস্ফোরণ ঘটানো হুন্ডাই আই২০ গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। এই ঘটনায় তারও মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা তদন্তকারীদের।

 

এদিকে, দিল্লির গাড়ি বিস্ফোরণের তদন্তে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) একটি বিশেষ টিম গঠন করেছে। ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মতে, হামলাটি জইশ-ই-মোহাম্মদের একটি ঘাঁটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে, যা সম্প্রতি উন্মোচিত হয়।

 

সুপারিনটেনডেন্ট পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে গঠিত এই এনআইএ টিম সমন্বিত ও গভীর তদন্ত চালাবে, যাতে হামলার পরিকল্পনা, জড়িত ব্যক্তিদের যোগাযোগ ও আন্তর্জাতিক সংযোগগুলো উদঘাটন করা যায়।

 

সরকার জানিয়েছে, এই ঘটনার তদন্ত ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ পাবে ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

 

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া