উচ্চ আদালতে রিট করে খেলাপিদের আবার ঋণ নেওয়ার পথ বন্ধ হচ্ছে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ::

 

খেলাপি ঋণগ্রহীতারা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করেই এক শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করে স্থগিতাদেশ নিয়ে সেই ঋণ ‘নিয়মিত’ করে ফেলছেন। এমন সুবিধা নিয়েছেন এক হাজার ৮৬ জন ঋণগ্রহীতা।

 

 

তাদের নিয়মিত করা ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৬৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এই অনিয়ম ঠেকাতে এবার কঠোর হতে যাচ্ছে সরকার।

 

অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে সম্প্রতি একটি বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এবং ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তারা (সিএফও)।

 

বৈঠকে অংশ নেওয়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা  জানান, দেশের অনেক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধ না করেও আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য আইনের অপব্যবহার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।

 

সূত্র জানায়, খেলাপি ঋণ থেকে রেহাই পেতে রিট করার পেছনে রাজনৈতিক ও বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের ভূমিকা রয়েছে। এই অপচর্চা বন্ধে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কোন কোন আইনের মারপ্যাচ বন্ধ করতে হবে, সেগুলোও চিহ্নিত করা হয়েছে।

 

একইসঙ্গে, উচ্চ আদালতে আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট মামলাগুলো পরিচালনার জন্য একটি ডেডিকেটেড বেঞ্চ গঠনের প্রস্তাবও উঠেছে। এতে করে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে এবং ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ অর্থ আটকে থাকবে না।

 

বর্তমানে, গ্রাহকরা অনুমোদিত ঋণের মাত্র ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়েই রিট করে স্থগিতাদেশ নিতে পারছেন এবং পরবর্তীতে নতুন ঋণ পাওয়ার সুযোগও তৈরি হচ্ছে। সরকার এই হার বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত করতে চায়, যাতে এ ধরনের সুবিধা গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়ে। এতে করে খুব সহজে রিট করে খেলাপি খাতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ হবে।

 

এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। নতুন নীতিমালা প্রণয়নের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত অর্থঋণ আদালতে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা দুই লাখ ৫৩ হাজার ৯১টি। এসব মামলার বিপরীতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৪৩ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিচারাধীন মামলাতেই আটকে রয়েছে দুই লাখ ৩০ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। অথচ আদায় হয়েছে মাত্র ছয় হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা, যা মোট পাওনার মাত্র ৩ শতাংশ।

 

আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিট করে সহজে খেলাপি খাতা থেকে বেরিয়ে আবার নতুন করে ঋণ নেওয়ার সুযোগ বন্ধ করা গেলে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরবে। প্রকৃত উদ্যোক্তারা ঋণের সুযোগ পাবে এবং ব্যাংক খাতে টাকার অপচয় কমবে।