আজ পবিত্র ঈদুল আজহা। আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য নির্দিষ্ট পশু কোরবানি করছেন মুসলমানরা।
কিন্তু ঈদুল আজহার পরবর্তী সময়ে রাজধানীসহ দেশের শহরাঞ্চলে অনেক এলাকায় ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কোরবানির পশুর রক্ত, মজ্জা, হাড়গোড় ও বিষ্ঠায় কোনো কোনো জায়গা বিশালাকারের ভাগারে রূপ নেয়।
উৎকট দুর্গন্ধে ঈদের আনন্দটাই যেন ম্লান হয়ে যায়। সময়মতো কোরবানির বর্জ্য অপসারণ না করাই এর মূল কারণ।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা যেহেতু ইমানের অংশ, সেহেতু কোরবানির মতো মহান ইবাদত কোনোভাবেই অপরিচ্ছন্নতার কারণ হতে পারে না। কোরবানিদাতাদের অবহেলা ও অসচেতনতাই এর জন্য দায়ী।
অনেক কোরবানিদাতা মনে করেন, পশুর চামড়া ছাড়ানো, গোশত সংগ্রহ এবং বণ্টন করেই দায়িত্ব শেষ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বর্জ্য অপসারণে অবহেলা ইমানের দুর্বলতারই প্রমাণ বহন করে।
এ ধারণা ভুল যে, গোশত ভাগ করা কোরবানিদাতার কাজ, আর বর্জ্য পরিষ্কার কেবল পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। বর্জ্য অপসারণের প্রথম দায়িত্ব কোরবানিদাতারই। যথাসময়ে বর্জ্য অপসারণ না করে প্রতিবেশী ও আশপাশের মানুষের কষ্টের কারণ হলে এর দায় কোরবানিদাতাকেই নিতে হবে। ইসলাম কাউকে এমন কাজের অনুমতি দেয়নি, যাতে প্রতিবেশী কষ্ট পায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যার কষ্ট থেকে আশপাশের মানুষ নিরাপদ নয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ”
— সহিহ বোখারি: ৫/২২৪০; মুসলিম: ১/৬৮
অন্য হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি হালাল খাদ্য খেয়ে জীবন যাপন করবে, সুন্নত অনুসারে আমল করবে এবং তার দ্বারা কোনো মানুষ কষ্ট পাবে না—সে জান্নাতি হবে। ”
— তিরমিজি: ৪/৬৬৯
ব্যক্তিগত সচেতনতা ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার সমন্বিত প্রয়াস থাকলে অল্প সময়েই বর্জ্য অপসারণ সম্ভব। হজের সময় প্রায় দেড় মাস মক্কা, মদিনা, মুজদালিফা ও মীনায় লাখো হাজি অবস্থান করেন। তাদের একাধিক কোরবানির পরও পবিত্র ভূমি অপরিচ্ছন্ন হয় না। বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) বলছে, মক্কার আদলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুললেই এ সমস্যা সমাধান সম্ভব।
আসলে নিজ নিজ জায়গা থেকে সবাই সচেতন না হলে, শুধু রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এই বিশাল বর্জ্য সরানো সম্ভব নয়। কোরবানির বর্জ্য বা যেকোনো কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে পরিবেশকে বাসযোগ্য রাখা প্রত্যেকের দায়িত্ব।
হাদিসে এসেছে, “এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় একটি কাটাওয়ালা ডাল দেখতে পায় এবং তা সরিয়ে দেয়। আল্লাহ তার এ কাজ কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। ”
— সহিহ বোখারি: ১/২৩৩; মুসলিম: ৩/১৫২১
পরিবেশের মালিক আমি নই, বরং আমি কেবল এর ভোগের অধিকার পেয়েছি। সেই অধিকার অবাধ নয়, একারও নয়। পরিবেশ থেকে উপকৃত হওয়ার অধিকার যেমন আমার, তেমনি আছে অন্যেরও। তাই আমার কর্মকাণ্ডে পরিবেশ দূষণ ও অপরের কষ্ট ইসলাম অনুমোদন করে না।
পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ। তাই বর্জ্য অপসারণ করে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ইমানি দায়িত্ব ও দাবি। আমার কোরবানির বর্জ্য আমি নিজেই সরাবো—এই হোক আমাদের মানসিকতা।







