রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ থামার কোনো ইঙ্গিত নেই। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সরাসরি আলোচনায়ও শান্তির পথে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বন্দী বিনিময়ের মতো কিছু বিষয়ে সমঝোতা হলেও, মূল প্রশ্ন— যুদ্ধ কীভাবে থামবে? সে বিষয়ে দুই দেশের অবস্থান স্পষ্টভাবেই বিপরীতমুখী থেকে গেছে।
রাশিয়া স্পষ্ট করে দিয়েছে, আপোষের কোনো জায়গা নেই।
ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের হাতে দেওয়া একটি স্মারকলিপিতে দেশটি যে শর্তগুলো দিয়েছে, তা ইউক্রেনের কাছে আত্মসমর্পণের শামিল। এই স্মারকলিপিতে চারটি দখলকৃত অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকার করতে বলা হয়েছে ইউক্রেনকে— যা কিয়েভ আগেও বহুবার প্রত্যাখ্যান করেছে।
রাশিয়ার দাবি এখানেই থেমে নেই। তারা ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর আকার সীমিত করতে চায়, নিষিদ্ধ করতে চায় সামরিক জোটে যোগদান, বিদেশি সেনাদের আশ্রয় দেওয়া ও পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন।
এ ধরনের শর্ত ইউক্রেনের জন্য নিছক নিরস্ত্রীকরণই নয়, বরং ইউরোপের নিরাপত্তার প্রতিও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে দেখে।
রাশিয়া আরও দাবি করছে, তাদের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে হবে এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। পাশাপাশি, কোনো পক্ষই ক্ষতিপূরণের দাবি তুলতে পারবে না।
রাশিয়ার এই অনড় অবস্থানের পেছনে রয়েছে দুটি বড় কারণ। প্রথমত, সামর্থ্যের ব্যবধান সত্ত্বেও ইউক্রেন এখন রাশিয়ার ভেতরে গভীর পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম। সম্প্রতি ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় রাশিয়ার কৌশলগত বোমারু বিমানঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে— যা একটি বড় বার্তা।
দ্বিতীয়ত, মার্কিন রাজনীতিতে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হতাশা বাড়লেও রাশিয়া তার দাবিতে আরও কঠোর হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প সম্প্রতি পুতিনকে ‘পাগল’ বলে অভিহিত করেন। কিন্তু এই বক্তব্যের বিপরীতে রাশিয়া যেভাবে শান্তির প্রস্তাবকে উপহাসের জায়গায় নিয়ে গেছে, তাতে ট্রাম্প নিজেই এখন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প চাইলে এখনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেন—যেমন, ইউক্রেনকে অতিরিক্ত সামরিক সহায়তা দেওয়া বা রাশিয়ার ওপর আরও কঠিন নিষেধাজ্ঞা চাপানো, যেগুলো মার্কিন সিনেটে সহজেই পাস হবে।
সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেন্থাল ইতোমধ্যেই রাশিয়ার এই মনোভাবকে শান্তি প্রচেষ্টার প্রতি তাচ্ছিল্য বলে আখ্যা দিয়েছেন। এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, রাশিয়া ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রকে বোকা বানিয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো, এই সংকটময় মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কী সিদ্ধান্ত নেবেন? রাশিয়া যদি তার অবস্থান থেকে একচুলও না সরে, তবে ট্রাম্পের প্রশাসনের ওপরই চাপ এসে পড়বে—কীভাবে যুদ্ধ থামিয়ে একটি টেকসই শান্তিচুক্তি নিশ্চিত করা যায়।
বিশ্লেষকদের মতে, পুতিনের এই আপোষহীনতা হয়তো ট্রাম্পকে এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করবে, যা বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির গতিপথ পাল্টে দিতে পারে।







