সব সাজা থেকে মুক্ত হলেন তারেক রহমান

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ::

 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০০৭ সাল থেকে ৮০টির অধিক মামলা হয়। পর্যায়ক্রমে সেসব মামলার ভেড়াজাল থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত হচ্ছিলেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।

 

এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, অর্থ পাচার মামলা, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলা এবং মানহানির মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড হয়।

দণ্ডের এসব মামলার মধ্যে দুটি মামলা আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে।

 

একটি হচ্ছে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা এবং অপরটি হচ্ছে অর্থ পাচার মামলা। এছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় পৃথক ধারার দণ্ড থেকে হাইকোর্ট খালাস দিলেও বর্তমানে মামলাটি আপিল বিভাগে বিচারাধীন।

এদিকে নড়াইলে মানহানির মামলায় দুই বছরের দণ্ড হলেও বাদী আবেদনের প্রেক্ষিতে সেটি প্রত্যাহার করা হয়। আর জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় দুই ধারায় ছয় ও তিন বছরের দণ্ড বুধবার হাইকোর্ট থেকে খালাস পেয়েছেন।

 

ফলে আইনজীবীরা বলছেন, এর মধ্যে দিয়ে দণ্ডের সব মামলায় সাজামুক্ত হলেন তারেক রহমান।

 

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আজাদুল ইসলাম এবং বিএনপির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক মো. জাকির হোসেন ভূঁইয়া ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. আজমল হোসেন খোকন তার সব মামলায় সাজামুক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

 

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে জামিনে মুক্তি নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই থেকে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। এরপর তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর একটি মামলায় ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত তারেক রহমানকে খালাস দেন। ওই মামলায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তারেক রহমানকে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হাইকোর্টে আপিল করেন। ওই আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ২১ জুলাই বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকেও সাত বছরের কারাদণ্ড দেন।

 

এ রায়ের বিরুদ্ধে গিয়াস উদ্দিন মামুন আপিল বিভাগে আপিল করেন। শুনানি শেষে সেই আপিল মঞ্জুর আপিল বিভাগ। ফলে মামুনের সঙ্গে তারেক রহমানও খালাস পান।

 

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেন। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে দুদকের আপিলে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেছিলেন হাইকোর্ট। পরে খালেদা জিয়ার আপিলের সেটি মঞ্জুর করা হয়। তখন অন্যদের সঙ্গে তারেক রহমানও খালাস পান।

 

জ্ঞাত আয় বহির্ভূতভাবে সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগের মামলায় ২০২৩ সালের ২ আগস্ট ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালত তারেক রহমানকে ৯ বছর ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে ৩ বছর কারাদণ্ড দেন। এ মামলায় জুবাইদা রহমান আপিল করেন। বুধবার সে আপিল মঞ্জুর করায় তারেক রহমানও খালাস পেলেন।

 

২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার ও পাকবন্ধু আখ্যা দিয়ে বেশ কিছু বক্তব্য দেন তারেক। সেই খবর প্রকাশিত হয় দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে।

 

এতে বঙ্গবন্ধুর সম্মানহানি হয়েছে জানিয়ে সে সময় নড়াইলের মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান বিশ্বাস নড়াইল জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তারেকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। এ মামলায় নড়াইলের একটি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়। মামলার বাদী শাহজাহান বিশ্বাস মামলায় পুনর্বিচার চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্ট মামলাটিতে পুনরায় বিচার করতে নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেন। এরপর নড়াইলের আদালতে মামলাটি বিচার পুনরায় শুরু হলে বাদী শাহজাহান বিশ্বাস মামলা না চালানোর জন্য আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।