ইশরাকের মেয়র পদ নিয়ে রিটের আদেশ পিছিয়ে বৃহস্পতিবার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  ::

 

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেটের বৈধতা নিয়ে এবং শপথ পড়ানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা চেয়ে রিটের আদেশ পিছিয়ে বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করা হয়েছে।

 

বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার (২১ মে) দুপুর সোয়া ১টায় এ আদেশ দেন।

 

 

এ রিটের ওপর মঙ্গলবার (২০) দুপুর ১টায় শুনানি শুরু হয়। চলে প্রায় ২টা পর্যন্ত।

 

এরপর আদালতে বিকেল ৪টা ১০ মিনিট থেকে প্রায় সোয়া ৫টা পর্যন্ত শুনানি চলে। তারপর আদেশের জন্য বুধবার সাড়ে ১২টার সময় নির্ধারণ করা হয়।

বুধবার আদেশের আগে ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আইনজীবী কায়সার কামাল এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন রিট খারিজের পক্ষে শুনানি করেন। পরে এর জবাব দেন রিটের পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন।

 

দুই পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন রেখেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার আদালতে আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় থেকে কয়েকটি ‘ভুল’ আদালতে তুলে ধরে রুল জারির আর্জি জানান। আর আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামালের মতে, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে বিবাদী পক্ষ সংক্ষুব্ধ হলে নির্বাচনী আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে পারে। তবে সেটা হতে হবে মামলার বিবাদী পক্ষ। যেমন ফজলে নূর তাপস। কিন্তু সেখানে আপিল না করে একজন আইনজীবী রিটকারী হয়ে হাইকোর্টে আসতে পারেন না। তাই এ রিট খারিজযোগ্য।

 

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে। এরপর শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তাপস।

 

সেই নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে তাপস পেয়েছিলেন সোয়া চার লাখ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ইশরাক পান দুই লাখ ৩৬ হাজার ভোট। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।

 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান মিয়া।

 

এর মধ্যে গত ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম।

 

আদালত ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন। এ রায় পাওয়ার পর ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।

 

এদিকে গেজেট প্রকাশের দিন ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করতে আইনি নোটিশ দেন রফিকুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ নামে দুই ব্যক্তি। নোটিশে গেজেট প্রকাশ এবং ইশরাককে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।

 

তখন ওই দুই ব্যক্তির আইনজীবী বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে দ্রুত রায়টি দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম, ইসি এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করবে। চ্যালেঞ্জ করল না। আবার খবরে দেখলাম, আইন উপদেষ্টা বলছিলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের যে মতামত চাওয়া হয়েছিল, সেজন্য অপেক্ষা না করে এই নোটিফিকেশন জারি করে দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এমন কোনো আদেশ দিতে পারেন না যে আদেশের কোনো কার্যকারিতা নেই। এখানে টার্ম শেষ হয়ে গেছে। অধ্যাদেশের মাধ্যমে মেয়র পদশূন্য করে দেওয়া হয়েছে।

 

পরে মামুনুর রশিদ হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে ২৭ মার্চের রায় এবং ২৭ এপ্রিলের গেজেট কেন বেআইনি হবে না এবং ইশরাক হোসেনের শপথ পরিচালনা থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় রায় ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়েছে।

 

এদিকে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে নগর ভবন ব্লকেড কর্মসূচিতে নেমেছেন তার সমর্থকরা। গত কয়েকদিন ধরে এ নিয়ে তারা কর্মসূচি পালন করে আসছেন।