ঈদুল ফিতরের একদিনের ছুটি কাটিয়ে আবারও ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটছে ট্রেন। মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে শুধু আন্তঃনগর ট্রেনগুলো ছেড়ে যাচ্ছে।
আজ ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে নগরবাসী। ছেড়ে যাওয়া ট্রেনে যাত্রীর চাপ ছিল মোটামুটি।
আজও দাঁড়িয়ে যাচ্ছে যাত্রীরা।
এদিকে ঈদের ফিরতি যাত্রা শুরু হবে বুধবার (২ এপ্রিল) থেকে, তারপরও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলোতে যাত্রী কম থাকায় ফাঁকা সিট নিয়ে ঢাকা ফিরছে।
মঙ্গলবার সকালে কমলাপুর রেলস্টেশন সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদের পরদিনও মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। কমলাপুর থেকে ৭১টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে।
এর মধ্যে আজকে ৪৬টি আন্তঃনগর ট্রেন চলবে। আজ সকাল থেকে শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। আজকে রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মগুলোতে যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়নি। যাত্রীরা ধীরে-সুস্থে ট্রেনে উঠছে। ট্রেনগুলো যাত্রীতে পরিপূর্ণ ছিল। আজ যারা ভ্রমণ করছেন, তাদের বেশিরভাগ আবার আগে থেকে টিকিট কাটেননি।
ট্রেন ছাড়ার আগমুহূর্তে কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে নিচ্ছেন। আজও স্ট্যান্ডিং টিকিট দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেক যাত্রী সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। স্টেশনে কাজ করা কুলি ও শ্রমিকরা আজও কাজে ব্যস্ত। তারা যাত্রীর ব্যাগ টেনে নিয়ে যাচ্ছে নির্দিষ্ট বগিতে।
এদিকে আজকে ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘোরা-ফেরা করছেন। সন্দেহ হলে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। স্টেশনের সামনে, সিএনজিচালিতরিকশা ও গাড়ির কোনো লাইন দেখা গেলও ভিড় বা যানজট চোখে পড়েনি।
অগ্নিবীণা ট্রেনে জামালপুর যাচ্ছেন মো. অন্তর মিয়া। তিনি বলেন, ঢাকায় একটা ছোটখাটো ব্যবসা করি। ঈদে বেচা-কেনা বেশি থাকে। সেজন্য ঈদের আগে গ্রামের বাড়ি যেতে পারিনি। তাই আজকে পরিবার নিয়ে এক বছর পর গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। সেখানে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের সঙ্গে কয়েকদিন আনন্দে কাটানো যাবে। আসলে আমরা এখন যান্ত্রিক হয়ে গেছি। জীবনের ঘানি টানতে টানতে জীবনের আনন্দ করা সময় কোন দিক দিয়ে চলে যাচ্ছে টের পাওয়া যায় না। তাই ঈদের ছুটিটা কোনোভাবেই মিস করতে চাই না।
অগ্নিবীণা ট্রেনের আরেক যাত্রী মো. রাসেল শেখ বলেন, ভাই কাজ করে খাই। চাইলেই নিজের মতো করে কোথাও যেতে পারি না। গতকাল ঈদের দিনও ডিউটি করতে হয়েছে। আজকে থেকে ছুটি পেয়েছি। তাই বাড়ি যাচ্ছি। কমলাপুর এসে টিকিট নিয়েছি। কোনো সমস্যা হয়নি। ভাবছিলাম আজকে ট্রেনে যাত্রী কম হবে। কিন্তু না আজও দাঁড়িয়ে যাচ্ছে মানুষ। এর কারণ হলো ঈদোর পর ট্রেন সংখ্যা কম থাকায় সব রুটে ট্রেন চলাচল করছে না। ফলে অনেকেই অন্য রুট দিয়ে যাচ্ছে। তাই ভিড় একটু বেশি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে উপকূল এক্সপ্রেসে ঢাকা ফিরলেন মো. জিসান নামে এক যাত্রী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এবছরের মতো এত সুন্দর ঈদ যাত্রা কখনো করিনি। ঈদের আগের দিন গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গিয়েছি। ঈদ করে আজকে ফিরলাম। খুব আরামদায়ক জার্নি ছিল। এবার যেমন ব্যবস্থাপনা সেটা যেন প্রতি বছর আমরা পাই। সেজন্য বর্তমান সরকারকে কিছু দিন থেকে সবখাতে সংস্কার করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে।
কমলাপুর স্টেশনে দীর্ঘদিন কুলির কাজ করেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঈদের পর যাত্রীদের চাপ কম থাকে। তাই রিলাক্সে আছি। গত কয়েকদিন অনোক চাপ ছিল। আজকে যাত্রী আছে তবে কম। অনেকেই নিচের ব্যাগ নিজে টানছে। যাদের অনেক বেশি ব্যাগ তারাই শুধু আমাদের ডাক দেয়। বুধবার থেকে ফিরতি ট্রেন স্টেশনে আসবে। তখন ভিড় হতে পারে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত ঈদে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সবচেয়ে বেশি ঘরমুখো মানুষ ট্রেনে ঈদযাত্রা করেন। এ কারণেই বাড়তি নজর রয়েছে কমলাপুরে। ঈদযাত্রায় আন্তঃনগর, মেইল, কমিউটার মিলে প্রতিদিন ৭০ হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঈদযাত্রায় সব ট্রেন সঠিক সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ৭১টি ট্রেন চলাচল করছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিদিন ঢাকামুখী ৩০ হাজার ৪৯১টি টিকিট বিক্রি করছে। এ কয়দিন কমলাপুর স্টেশনে টিকিট ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আগামী ২ এপ্রিল থেকে ফিরতি যাত্রা শুরু হবে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদযাত্রায় স্টেশনের শুরু থেকে ট্রেনের গন্তব্য পর্যন্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। টিকিট যাচাইয়ের জন্য ভেরিফিকেশন করা হচ্ছে। পাশাপাশি ট্রেনের সময়সূচি ঠিক রাখতে এবং যাত্রীদের সুবিধার্থে ঢাকাগামী নয়টি ট্রেনের বিমানবন্দর স্টেশনের যাত্রাবিরতি বাতিল করা হয়েছে। ঢাকামুখী ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে জয়দেবপুর স্টেশন থেকে ঢাকামুখী এবং ঢাকা স্টেশন থেকে জয়দেবপুরমুখী ট্রেনে টিকিট ইস্যু বন্ধ রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে ঈদযাত্রা নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও উৎসবমুখর করতে কমলাপুর রেলস্টেশনে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। টিকিট কাউন্টার, প্ল্যাটফর্মসহ সব জায়গায় র্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্যের পাশাপাশি রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীও ছিল।
এ বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের কর্মকর্তা (স্টেশন মাস্টার) আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ঈদে একদিন ছুটি ছিল। আজ সকাল থেকে আবারও ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। রাজশাহীগামী ধুমকেতূ এক্সপ্রেস, এগারো সিন্ধুর প্রভাতী, তিস্তা এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, অগ্নিবীণাসহ বেশ কয়েকটি ট্রেন কমলাপুর ছেড়েছে। ট্রেনগুলোতে যাত্রী ছিল মোটামুটি। আবার ঢাকাতে ঢুকেছে উপকূল এক্সপ্রেসসহ কয়েকটি ট্রেন।
তিনি বলেন, বুধবার থেকে ফিরতি যাত্রা শুরু হবে। ট্রেনগুলো সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেলক্ষ্যে ঢাকা থেকে সঠিক সময়ে আন্তঃনগর ট্রেনগুলো ছেড়ে যাচ্ছে, যেন দেশের বিভিন্ন স্টেশন থেকে নির্ধারিত সময়ে ট্রেনগুলো আবার ঢাকায় ফিরতে পারে। এটা করতে পারলে ফিরতি যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হবে।
উল্লেখ, রাজধানীতে বিরাজ করছে ছুটির আমেজ। এবারের রোজার ঈদে সরকারি ছুটি থাকবে ৯ দিন। এর সঙ্গে যুক্ত হবে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার।
এবার ২৯ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে ঈদুল ফিতরের ছুটি। টানা পাঁচ দিনের ছুটি (২৯, ৩০, ৩১ মার্চ এবং ১ ও ২ এপ্রিল)। এর ওপর মাঝখানে একদিন ৩ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) সরকার নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করেছে। এরসঙ্গে যুক্ত হবে শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি।







