বঙ্গোপসাগরে বিভিন্ন সময়ে জন্ম নেওয়া ঝড়-সাইক্লোনে স্থলভাগের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঠেকাতে বরাবরই ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে সুন্দরবন। ঘূর্ণিঝড় রিমালের বিদায়ের পর আবারও আলোচনায় বাংলাদেশ অংশে ছয় হাজারের বেশি বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, বুলবুল, আম্পান, ইয়াস, এর পর রিমালের তাণ্ডব রুখে দিল সুন্দরবন।
সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের ভয়াবহতা কেটে গেছে।
এখনও চলছে ঝড়ের তান্ডব। সকাল থেকে ভারী বৃষ্টির সাথে বইছে মাঝারি বাতাস। গতকাল রবিবার (২৬ মে) উপকূল এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। তবে ভয়ানক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন।
বাতাসের গতিবেগ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে সুন্দরবনের ঘন গাছ পালা। সোমবার দিনভর ঝড় বৃষ্টির কারণে উপকূলীয় এলাকার নদ-নদী এখনো উত্তাল রয়েছে।
সাতক্ষীরা উপকূলের বুড়িগোয়ালীনি এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা রমেছা খাতুন, আজিজ সরদারসহ অনেকে জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমাল জেলাজুড়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। অনেক ফলজ ও বজন বৃক্ষ উপড়ে গেছে।
এলাকার কয়েকটি মাছের ঘের জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। তবে বরাবরের মতো এবারও সুন্দরবন তাদের রক্ষা করেছে। বাতাসের গতিবেগ অনেক কমিয়ে দিয়েছে।
আশাশুনির প্রতাপনগর এলাকার মাসুম হোসেন জানান, বর্তমানে প্রতাপনগর অঞ্চলে ঝোড়ো হাওযা এখনও বইছে। বাতাসে নদীর পানিতে বড় বড় ঢেও সৃষ্টি হচ্ছে।
নদীতে ভাটার টানে পানি কমলেও নিন্ম এলাকার বৃষ্টির পানি নদীতে পড়ে ফের পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শ্যামনগরের সাবেক প্রকৌশলী শেখ আফজাল বলেন, রিমালের কবল থেকে সাতক্ষীরার উপকূল এখন প্রায় বিপদমুক্ত বলা যায়। তবে সুন্দরবন এলাকার নদ-নদী এখনো উত্তল রয়েছে। হালকা ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকায় নদ-নদীতে ঢেউ আচড়ে পড়ছে উপকূলে। শুধু বেড়িবাঁধের দিকে খেয়াল রাখতে হবে যেন নদীর পানি ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে।
শ্যামনগরের সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল সাতক্ষীরা উপকূলে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। অনেক গাছগাছালি উপড়ে চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এখনো ভারি বৃষ্টির পাশাপাশি ঝোড়ো হাওয়া বয়ে চলছে। নদ-নদীগুলো এখনও উত্তাল। জোয়ারের পানি এখনও কমেনি।
তিনি আরো বলেন, বৃষ্টিতে বাঁধের মাটি নরম হয়ে গেছে। ভাটিতে পানি কমার কথা থাকলেও পানি কমছে না। এতে অনেক এলাকায় বাঁধে ফাটল দেখা দিতে পারে। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটা জানা যায়নি।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি সাতক্ষীরা অতিক্রম করেছে। রাত ১টায় এখানে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৭২ কিলোমিটার। সন্ধ্যা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত এই জেলায় ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এখনও (সোমবার বিকাল ৪টা) ঝড় বৃষ্টি অব্যহত আছে।