দুই সন্তান আয়ান (৮) ও আয়াতকে (৬) নিয়ে বেইলি রোড এলাকায় বসবাস করতেন নাজিয়া আক্তার (৩১)। তাঁর স্বামী মো. আশিক পেশায় ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ব্যবসার কাজে বনানীতে যান আশিক। আর নাজিয়া দুই সন্তানকে নিয়ে বেইলি রোডে ভবনের তৃতীয় তলার একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যান। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তিনি স্বামীকে ফোন দিয়ে বলেন তাঁরা বিপদে আছেন।
নিহত নাজিয়ার আত্মীয় রিফাত হোসেন জানান, ঘটনার সময় তিনি ওই ভবনের সামনে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ ভবনটির নিচতলায় বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পান। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তৃতীয় সিঁড়ি থেকে আয়ানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আগুনে মারা গেছেন নাজিয়া এবং আয়াতও। ঢাকা মেডিকেলের মর্গে তাঁদের মরদেহ রাখা হয়েছে।
ভাগনে সান রায় (১০) ও ভাগনি সম্পূর্ণা রায়কে (১২) বৃহস্পতিবার স্কুলে নিয়ে গিয়েছিলেন মামা পীযূষ পোদ্দার। স্কুল শেষে আবার বিকেলে তাদের বাসায় নিয়ে আসেন তিনি। সন্ধ্যায় মা পপি রায়ের সঙ্গে বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁয় খেতে যায় তারা। আগুনে পুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন তারা তিনজনই। মুহূর্তেই একটি পরিবার শেষ হয়ে গেল।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গের সামনে গিয়ে দেখা যায়, চিৎকার করে করছিলেন পীযূষ পোদ্দার। তিনি জানান, ভাগনি সম্পূর্ণা পড়ত সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। আর সান রায় পড়ত উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণিতে। মা–বাবার সঙ্গে মালিবাগে থাকত তারা।
২৫ জনের মরদেহ হস্তান্তর২৫ জনের মরদেহ হস্তান্তর
তিনি আরও জানান, রেস্তোরাঁয় আগুন লাগার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তিনি সেখানে চলে যান। এসে দেখেন দাউ দাউ করে রেস্তোরাঁ জ্বলছে। কিন্তু কোথাও পপি, সম্পূর্ণ ও সানের খোঁজ পাননি। এরপর মধ্যরাতে ছুটে এসেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে। সম্পূর্ণা ও সানের মরদেহ খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু পপির কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না।
মধ্যরাত থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে স্বজনহারাদের ভিড়। তাঁদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বাতাস। গতকাল রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে লাগা আগুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন। তাদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।