হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ জাবি ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক

* এ ঘটনায় অভিযুক্তদের তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে মূল অভিযুক্তরা পলাতক

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাসহ দুজনের বিরুদ্ধে।

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন জঙ্গলে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত মামুন (৪৫)। ঘটনার মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তিনি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

ঘটনার মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজ ও মামুন পলাতক। তবে তাদের সহযোগিতার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের হাসানুজ্জামান, ৪৬ ব্যাচের সাগর সিদ্দিকী এবং বোটানি বিভাগের ৪৭ ব্যাচের সাব্বির হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে অভিযুক্তদের পালাতে সহযোগিতার প্রমাণ মিলেছে তাদের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত মামুন ওই দম্পতির বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। শনিবার সন্ধ্যায় প্রথমে ভুক্তভোগী নারীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে আনেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এলে তাকে মীর মশাররফ হোসেন হলের “এ” ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে জিম্মি করেন অভিযুক্তরা। মামুন তার বাসায় রেখে আসা জিনিসপত্র জিম্মির স্ত্রীকে নিয়ে আসতে বলেন।

ওই নারী মামুনের জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে এলে সেগুলো বুঝে নেন মামুন। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, অভিযুক্তরা তাকে “স্বামী অন্য গেট (জঙ্গলের দিক) থেকে আসছেন” বলে হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করেন।

ওই নারী বলেন, “মামুন আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতেন। (শনিবার) সন্ধ্যায় তিনি আমার স্বামীর মাধ্যমে ফোন করে আমাকে তার রেখে যাওয়া জিনিসপত্র নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বলেন। আমি তার জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে যাই। তখন তিনি আমাদের বাসায় থাকবেন না বলে জানান। তিনি মীর মশাররফ হোসেন হলের মোস্তাফিজ ভাইয়ের কাছে থাকবেন বলেও জানান।”

“এরপর মামুন আমার কাছ থেকে তার জিনিসপত্রগুলো নিয়ে হলে রেখে আসেন। আমার স্বামী অন্যদিক থেকে আসছেন বলে আমাকে হলের পাশে জঙ্গলের নিয়ে যায়। তার সঙ্গে মোস্তাফিজ ভাইও ছিল। সেখানে তারা আমাকে ধর্ষণ করে।”

এ ঘটনার প্রতিবাদে রাতেই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মীর মশাররফ হোসেন হল ঘেরাও করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে শাখা ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। একপর্যায়ে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলম ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “ঘটনা শুনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, “সে একটি জঘন্যতম কাজ করেছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা এ ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।”

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে মোস্তাফিজকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হয়েছে।”

এদিকে, মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পরপরই তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, “এ ঘটনায় পুলিশকে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত। হলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাকুক, আমরা শাস্তির ব্যবস্থা করব।”

এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত আব্দুর রাসিক বলেন, “ভুক্তভোগী থানায় উপস্থিত হয়ে ঘটনা জানিয়েছেন। আমরা প্রাথমিক তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত