মাত্র তিনদিন পরই শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। প্রাণের এ মেলার উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলেও সময়মতো প্রস্তুতি শেষ করা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। এখনো পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি একটিও স্টল। বেশিরভাগ স্টলের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কেউ কেউ সবেমাত্র বাঁশ-কাঠ এনে কাজে হাত দিয়েছেন। ফলে বাকি তিনদিনে শতভাগ কাজ শেষ করে উদ্বোধনী দিনে স্টলগুলো পুরোপুরি প্রস্তুত করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে খোদ প্রকাশকরা।
তারা বলছেন, বইমেলার একক আয়োজক বাংলা একাডেমি স্টল বরাদ্দসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত দিতে দেরি করায় কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। মেলা শুরুর পরও এক সপ্তাহ টুকটাক কাজ চলবে। উচ্চশব্দে মেলার পরিবেশ বিঘ্নিত হতে পারে।
তবে ভিন্ন কথা বলছেন আয়োজকরা। তাদের দাবি, মেলা শুরুর আগেই শতভাগ স্টলের কাজ এবার হয়ে যাবে। স্টল তৈরির পরও অনেকের ডিজাইন পছন্দ হয় না। তারা আবার একটু-আধটু পরিবর্তন আনেন। এতেই মনে হয় যেন মেলা শুরুর পরও কাজ শেষ হয়নি। এবার তেমনটি যেন না হয় সেদিকে কঠোর নজর রাখা হবে।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, চারদিকে ঠুকঠাক আওয়াজ। বেশিরভাগ স্টলের কাঠামো দাঁড় করানোর কাজ চলছে। কিছু কিছু স্টলে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নামের বোর্ড লাগানো হলেও বাকি বহু কাজ। স্টল বানানোর কাজে শ্রমিকরা এতটাই ব্যস্ত যেন কথা বলার ফুসরত নেই। সব স্টলেই শ্রমিকদের নির্দেশনা দিতে উপস্থিত প্রকাশনার কর্মকর্তারা। তারা কয়েক মিনিট পরপরই দ্রুত কাজ শেষ করার তাগাদা দিচ্ছেন। মেলা প্রাঙ্গণে এখন হাতুড়ি-পেরেকের শব্দ বেশি। মাঝেমধ্যে কোনো কোনো স্টলে দেখা মিলছে একমনে রং করার কাজ। রং-তুলির আঁচড়ে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে স্টল।
কাঠামো দাঁড় করিয়েই অনেকে নজর কাড়তে রঙিন নামফলক বা বোর্ড লাগিয়েছেন স্টলে। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে এমন কিছু স্টলও দেখা গেছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম- সালাউদ্দিন বইঘর, গাজী, কাকলী, উচ্ছ্বাস, শিরীন পাবলিকেশন্স, দি স্কাই পাবলিশার্স, প্রচলন, সত্যয়ন, সময় প্রকাশন, প্রিয়মুখ, শাপলা প্রকাশন ও পলল প্রকাশনী।
উৎস প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী মুস্তফা সেলিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার স্টলের কাজ ৩৫ শতাংশের মতো শেষ হয়েছে। এখানে তো প্রতিদিনই আসছি। খোঁজ-খবর রাখছি। যতটুকু দেখছি-শুনছি তাতে সব স্টলেরই গড়ে ৪৫-৫০ শতাংশের মতো কাজ হয়েছে। বাকি কাজটুকু শেষ করাই এখন চ্যালেঞ্জ। সবাই চেষ্টা করছেন। দেখা যাক ৩১ জানুয়ারির মধ্যে শেষ করা যায় কি না।’
তিনি বলেন, ‘বাঁশ-কাঠের ফ্রেমে এভাবে স্টল বানানো বেশ সময়সাধ্য। আমার মনে হয় এটা নিয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে। আমি আজকে দেখলাম একজন তরুণ স্টিলের ফ্রেম এনে একদিনের মধ্যে স্টল বানিয়ে ফেলেছে। তার কাজ প্রায় শেষ। মেলা শেষে ওগুলো ফেরত নিয়েও যেতে পারবে। এতে তার সময়ও বাঁচলো, টাকাও কম খরচ হলো। এভাবে সব স্টল স্টিলের ফ্রেম দিয়ে করা যায় কি না, তা বিবেচনা করতে বাংলা একাডেমিকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
প্রিয়মুখ প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাজ বেশ আগেই শুরু করেছিলাম। স্টলও খুব বড় না আমাদের। এজন্য ৬০-৬৫ শতাংশ কাজ শেষ। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বাকি কাজও শেষ হয়ে যাবে আশা করছি।’
এবার কিছুটা দেরিতে কাজে হাত দিয়েছে পাল প্রকাশনী। এখানে কোনো কাঠামোই দাঁড় করাতে পারেননি তারা। সেখানে কাজও করছেন কম শ্রমিক। যথাসময়ে স্টল শেষ হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে পাল প্রকাশনীর সেলস এক্সিকিউটিভ ও স্টল দেখভালের দায়িত্বে থাকা জাহাঙ্গীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘কাজ শুরু হলো, চলতে থাকুক। আশা করি হয়ে যাবে।’
ছোট স্টল দেওয়া সত্যয়ন প্রকাশনী বেশ আগেভাগে কাজ শুরু করেছিল। এতে স্টলের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ বলে জানালেন এ প্রকাশনা সংস্থার কর্মী আতিকুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমরা বরাদ্দ পেয়েই কাজ শুরু করেছি। স্টলের কাজ প্রায় শেষ। সোম বা মঙ্গলবারের মধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে যাবে। ১ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনের দিনে পাঠকরা আমাদের এখানে বই পাবেন।’
মেলার প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে অমর একুশে গ্রন্থমেলা কমিটির সদস্যসচিব ড. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অন্যবার স্টল তৈরির কাজ আরও দেরিতে শুরু হয়। এবার বেশ আগেই শুরু হয়েছে। কাজও ভালোমতো এগিয়ে যাচ্ছে। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ৯৫ শতাংশ বেশি কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। কেউ কেউ টুকটাক কাজ করবে, তাতে যেন মেলার পরিবেশ বিঘ্নিত না হয় তা নিয়ে আমরা সতর্ক থাকবো।’