বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অংশে গত কয়েকদিন ধরেই চলছে ব্যাপক গোলাগুলি ও বোমা বর্ষণ। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ২৬২ জন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ। এদিকে গতকাল সোমবার সীমান্ত পেরিয়ে আসা মর্টার শেলে এক বাংলাদেশীসহ দুজন নিহত হয়েছেন। আতঙ্কে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সীমান্তবর্তী স্কুল।
এবার ঘরবাড়ি থেকে আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছেন বান্দরবান জেলার ঘুমধুম সীমান্তের বাসিন্দারা। সয়-সম্বল নিয়ে পথে পথে তারা। নিজের দেশে বসে পর দেশের আতঙ্কে ঘরছাড়া হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু বাজার গিয়ে দেখা যায়, এই জমজমাট বাজারের প্রায়ই দোকানপাট এখন বন্ধ। মানুষজনও কম। একটু দূরে বিছনাপত্র অটোরিকশার ছাদে তুলছেন একই বাজারের কোনাপাড়ার শামীম হোসেন। তাকে সহযোগিতা করছেন চালক ইয়াসিন। কাছেই অপেক্ষা করছেন সন্তান কোলে ইয়াসমিন নামের এক নারী। আর তার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ননদ খুশবু আকতার।
এ সময় শামীম হোসেন বলেন, ‘সীমান্তে কেউ নিরাপদ নয়। তাই পরিবারের সদস্যদের উখিয়ার এক স্বজনের বাড়িতে গিয়ে রেখে আসব। আর বাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্য আমি থাকব।’
শামীম হোসেনের কথা শেষ হতে না হতেই আরও তিনটি অটোরিকশা ওই বাজার অতিক্রম করে। অটোরিকশাগুলো ভর্তি আসবাবপত্রে। ভেতরে আছেন শিশুসহ নারীরা।
তাদের বিষয়ে শামীম হোসেন বলেন, ‘ওরা আমার প্রতিবেশী। জীবন বাঁচাতে দূরে চলে যাচ্ছে।’
নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্তের বাসিন্দারা।
নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্তের বাসিন্দারা।
শুধু শামীম কিংবা ওই তিন প্রতিবেশী নয় গেল তিনদিন ধরে ঘুমধুম ইউনিয়নের প্রায় তুমব্রু বাজার সংলগ্ন প্রায় ১০/১২টি গ্রামসহ সীমান্তবর্তী এই ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম শিশু ও নারী শূন্য।
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা গত তিনদিন ধরে সীমান্তবাসীকে নিরাপদে সরে যাওয়া অনুরোধ করেছি। এরই মধ্যে ঘুমধুম ইউনিয়নে ঝুকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী ২৪০ পরিবারের মধ্যে প্রায় ১৫০ পরিবার নিরাপদ স্থানের আত্নীয় স্বজনের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামে সীমান্তে ঘেষে ৪০/৪৫টি পরিবার বসবাস করে। তাদের মধ্যে ৩০টি পরিবার অন্যত্র সরে গেছে। যারা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে তাদের পরিবারের এক বা একাধিক প্রাপ্ত বয়স্ক লোক ঘরবাড়ির ও গবাদি পশুর স্বার্থে বাড়িতে অবস্থান করছে।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ঘুমধুম পরিস্থিতি গতকালের চেয়ে আজ একটু ভালো। আশা করছি, দ্রুত সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা আশ্রয়কেন্দ্র খুলে রেখেছি। আমি কড়জোড়ে সীমান্তবাসীকে অনুরোধ করব আর কয়েকটা দিনের জন্য আপনারা নিরাপদ স্থানে সরে যান নতুবা আশ্রয় কেন্দ্রে উঠুন।’
নতুন ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রেরনতুন ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
বাড়িছাড়ার এমন চিত্র দেখা গেছে উখিয়া ও টেকনাফের সীমান্তবর্তী প্রায়ই গ্রামে। তবে কক্সবাজারে প্রশাসন তাদেরকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
পালংখালীর বাসিন্দা কক্সবাজারের সিনিয়র আইনজীবী আবদুল মান্নান বলেন, ‘প্রশাসন থেকে সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে। তবে যেভাবে ঘরবাড়িতে ওপারের বুলেট, গ্রেনেড ও গুলি এসে পড়ছে তাতে এখানে থাকা বিপদজনক। তাই আমার স্বজনদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছি।’
একই ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল গফুর বলেন, ‘প্রশাসন সীমান্তবাসীকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে যাদের অন্যত্র থাকার সুযোগ ও সামর্থ্য রয়েছে তারা সীমান্তের বসবাস ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন।’
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসাইন বলেন, ‘আমরা এখনো কাউকে সরানোর উদ্যোগ নেইনি। তবে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়েছি।’