শ্রমিককে মাদক মামলায় যেভাবে ‘ফাঁসালো’ পুলিশ

দেশ রূপান্তর

চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার উপপরিদর্শক আমির হোসেনের বিরুদ্ধে প্লাস্টিক কারখানার এক শ্রমিককে মারধরের পর সাত কেজি গাঁজাসহ আটকের ‘সাজানো’ মাদক মামলায় জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী শ্রমিকের নাম মো. বোরহান ওরফে আরিফ (২৬)। শুধু আরিফ নয়, চাঁদা না দেওয়ায় কারখানার মালিক আবদুল্লাহ আল নোমানকেও মামলার আসামি করেছেন এসআই আমির হোসেন। গত ১ মার্চ সন্ধ্যায় ঘটে এই ঘটনা। ‘একতা প্লাস্টিক’ নামের কারখানাটির অবস্থান বাকলিয়া থানাধীন নতুন ব্রিজ এলাকার বিসিএস হাউজিং সোসাইটির এ ব্লকে। এটির মালিক নোমানের (৩০) গ্রামের বাড়ি বাঁশখালী উপজেলা বাহারছড়া ইউনিয়নের ইলশা গ্রামে।

‘কথিত’ মাদকের মামলায় শ্রমিক আরিফের হেফাজত থেকে সাত কেজি গাঁজা জব্দের তালিকায় কারখানার পাশের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন ও মো. শিপন নামে দুই সহোদরের কাছ থেকে জোর করে সই নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। দুই সহোদর চাকরি করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে। থাকেন একতা প্লাস্টিক কারখানার পাশের এলাকায়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত ১ মার্চ রাতে আমাদের বাসায় আসেন দুই পুলিশ সদস্য। তারা একটি কাগজে আমাদের সই করতে বলেন। স্বাক্ষর না করায় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এসআই আমির হোসেন। এক পর্যায়ে তিনি আমাদের নিয়ে যান ‘একতা প্লাস্টিক’ কারখানায়। সেখানে গিয়ে দেখি বস্তা ভর্তি গাঁজা। শ্রমিক আরিফকে মারধর করছেন পুলিশ সদস্যরা। আমি পুলিশকে বলি—ঘটনার কিছুই জানি না। আমরা কেন স্বাক্ষী হবো? জবাবে পুলিশ বলে, ‘এই ব্যাটা তোদের কোনো সমস্যা হবে না। শুধু বলবি, এই মালগুলো আরিফের কাছে পাওয়া গেছে।’

এর আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি বেলা আড়াইটায় সাদা পোশাকে কারখানায় আসেন এসআই আমির হোসেন। এসেই কারখানা মালিক নোমানকে গালিগালাজ করেন তিনি (আমির)। এক পর্যায়ে নোমানের উদ্দেশ্যে এসআই আমির হোসেন বলেন, ‘ব্যবসা করতে হলে আমাকে প্রতিমাসে চাঁদা দিতে হবে। অন্যথায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

আমির হোসেনের এমন আচরণের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন কারখানার শ্রমিক বোরহান ওরফে আরিফ। একপর্যায়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন এসআই আমির। যাওয়ার সময় নোমানকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তিনি। এ ঘটনার ১১ মিনিট ২ সেকেন্ডের তিনটি পৃথক ভিডিও ফুটেজ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।

কারখানা মালিক আবদুল্লাহ আল নোমান অভিযোগ করেন, গত ১ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাদা পোশাকে তার কারখানায় আসেন এসআই আমির হোসেনসহ চারজন পুলিশ সদস্য। এ সময় সিসিটিভি ক্যামেরা আছে কিনা জানতে চেয়ে উত্তরে ‘না’ বলার পর ‘এ কাজ কতদিন থেকে করিস’ বলে শ্রমিক আরিফকে মারধর করতে থাকেন পুলিশ সদস্যরা। আধাঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে আসেন আরও চার পুলিশ সদস্য।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জামশেদ হোসেন বলেন, ‘১ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে একতা কারখানার শ্রমিক আরিফ তার দুটি ছাগল বাঁধছিল। এ সময় চারজন পুলিশ সদস্য বস্তা নিয়ে এসে আরিফকে বলে, ‘এগুলো কতদিন থেকে করিস? এই বলে তাকে মারধর শুরু করেন। পরে তাকে গাঁজার বস্তাসহ আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। শুনেছি—রাতেই আরিফ ও কারখানা মালিক নোমানকে মাদকের মামলায় আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে।’

একতা প্লাস্টিক কারখানার শ্রমিক আরিফকে মারধরের পর ৭ কেজি গাঁজা উদ্ধারের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার, চাঁদা না দেয়ায় কারখানা মালিক আবদুল্লাহ আল নোমানকে মামলার আসামি করা এবং দুই সহোদরকে জোরপূর্বক জব্দ তালিকায় সাক্ষী করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এসআই আমির হোসেন।

তিনি গতকাল রবিবার (৩ মার্চ) সন্ধ্যায় সাড়ে ৭টায় দেশ রুপান্তরকে বলেন, ‘কারখানা মালিক নোমানের অভিযোগ মিথ্যা। গ্রেপ্তার হওয়া আরিফ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেছে।’ তবে ঘটনা ‘সংঘটিত’ হওয়ার ৯দিন আগে ২১ ফেব্রুয়ারি কেন সাদা পোশাকে ওই কারখানায় গেলেন সেই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি এসআই আমির হোসেন।

এই প্রসঙ্গে বাকলিয়া থানার ওসি আফতাব আহমেদ বলেন, ‘আরিফকে ৭ কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এবং একতা কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে মাদ্রকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের সুনির্দিষ্ট আইনে মামলা হয়েছে। মামলা সাজানো হলে ৭ কেজি গাঁজা নিয়ে কোনো পুলিশ সদস্য ঘুরতে পারে?’

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত