শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরে বাধ্য হবে ভারত: প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

  • কবে নির্বাচন হবে তা বলতে রাজি হননি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
  • ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার সবকিছু ধ্বংস করে গেছে, বলেন তিনি
  • আন্তর্জাতিক আইন “ভারত মেনে চলতে বাধ্য থাকবে”, মন্তব্য করেন তিনি

 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার শেষ হলে এবং রায় হয়ে গেলে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতকে তাকে হস্তান্তরের জন্য অনুরোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরে উভয় দেশের স্বাক্ষরিত একটি আন্তর্জাতিক আইন “ভারত মেনে চলতে বাধ্য থাকবে” বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

গত শনিবার নিক্কেই এশিয়াকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। গত সোমবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়।

নিক্কেইকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন পূর্ববর্তী সরকার সবকিছু ধ্বংস করে গেছে। নির্বাচনের আগে আমাদের অর্থনীতি, শাসনব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র ও বিচারব্যবস্থায় সর্বাত্মক সংস্কার করতে হবে।‘

বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থা, সংবিধান এবং বিচার ব্যবস্থার মতো ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে । জানুয়ারির মধ্যে ওই কমিশনগুলোর সুপারিশ পাওয়ার পর সরকার পূর্ণাঙ্গ সংস্কার বাস্তবায়ন করবে।

তবে কবে নির্বাচন হবে তা বলতে রাজি হননি প্রধান উপদেষ্টা। ড. ইউনূস বলেন, “এই সংস্কার বাস্তবায়নে সময় লাগবে, কারণ আমরা শুরু থেকে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ে তুলছি। সময়সীমা সংস্কার প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করবে, ফলাফল সময় নির্ধারণ করবে।“

নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি এ ধারণা নাকচ করে দিয়ে বলেন, “না, আমি রাজনীতিবিদ নই। আমি সবসময় রাজনীতি থেকে দূরে রয়েছি।” তিনি বলেন, “যেসব ব্যক্তি নীতিকে সমুন্নত রাখে, নিয়ম ও পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং দুর্নীতিমুক্ত তাদের নির্বাচনে দাঁড়ানো উচিত।‘

হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে দেশের শাসনকাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে, আর গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করে তা পুনর্গঠনের সুবিশাল কর্মযজ্ঞ আমাদের ঘাড়ে এসে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন এই নেতা।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘হাসিনার শাসনামলে গণতন্ত্রের রীতি-নীতি একদম ধ্বংস হয়ে গেছে। টানা তিন মেয়াদে ভোটারবিহীন ভুয়া নির্বাচন মঞ্চস্থ করেছেন হাসিনা। আর তাতে তিনি নিজেকে এবং তার দলকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। একজন ফ্যাসিবাদী শাসক হিসেবে এসব করেছেন হাসিনা।’

কূটনৈতিক ফ্রন্টে বাংলাদেশের ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। এক্ষেত্রে ড. ইউনূস দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) পুনরুজ্জবনের প্রস্তাব করেছেন। ভারত ও পাকিস্তানের বৈরী সম্পর্কের ফলে সার্ক কার্যত নিষ্ক্রিয় রয়েছে। সার্কের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে ভারতেকে পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানান ড. ইউনূস।

ভারত সরকার বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন কারণ তাদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং মন্দিরে হামলার খবর পাওয়া গেছে। ঢাকাকে অবশ্যই হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে বলে জোর দিয়েছে নয়াদিল্লি। এগুলো সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বলা হচ্ছে না বলে পাল্টা অভিযোগ করেন ড. ইউনূস।

এ বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, “এই ইস্যুতে যা বলা হচ্ছে তার বেশিরভাগই অপপ্রচার এবং সত্যের ভিত্তিতে নয়।”

তিনি ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশে এসে তদন্তসাপেক্ষে সঠিক তথ্য তুলে ধরার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা এসব অপ-তথ্যের বিরুদ্ধে ভারত সরকারকে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য কাজ করছি।

বাজারে আসছে নতুন নোট, নকশায় বঙ্গবন্ধুর বদলে জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতিবাজারে আসছে নতুন নোট, নকশায় বঙ্গবন্ধুর বদলে জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি
সাক্ষাৎকারে অন্যান্য আঞ্চলিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ড. ইউনূস চীনকে “আমাদের বন্ধু” বলে অভিহিত করে বলেন, “রাস্তা ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ থেকে শুরু করে সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত, তারা (চীন) বিভিন্নভাবে আমাদের সহায়তা করছে। বাংলাদেশ বেইজিংয়ের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলেও জানান তিনি।

এছাড়া রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পক্ষ নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ এই দায়ভার কতদিন বহন করতে পারে? এই সংকট সমাধানের জন্য আমাদের একটি পরিষ্কার গন্তব্য এবং একটি যৌথ উদ্দেশ্য প্রয়োজন। রোহিঙ্গারা রাষ্ট্রহীন এবং কোথাও তাদের নাগরিকত্বের সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ মিয়ানমারে জাতিসংঘ-শাসিত নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পক্ষে বলেও জানান তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, “এটি রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশের শিবিরে থাকার অনুমতি দেবে। মিয়ানমারের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে, তাদের অন্য দেশে স্থানান্তরিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে।”

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত