রিমালের তাণ্ডব: বাংলাদেশে ২, ভারতে একজনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা

  • রিমালের তাণ্ডবে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ ভেঙে গেছে
  • ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে কক্সবাজার সৈকতের সমুদ্র উত্তাল হয়ে পড়ে

 

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে প্রবল গতিতে বাতাস বইতে শুরু করে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হয়।

বরগুনার আমতলীতে জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেঙে গেছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, রিমালের তাণ্ডবে বাংলাদেশ ও ভারত মিলিয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিভিন্ন জায়গায় প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বাড়ি থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে ৬৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মারা গেছেন। গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়ে ২৪ বছর বয়সী শরীফুল ইসলাম নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

বরগুনার তিনটি নদী বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। পরশুনিয়ার বাঁধ ভেঙে গেছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বাঁধের ওপর দিয়ে পানি বইছে। কক্সবাজারে জোয়ারের পানিতে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গেও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বাঁধ ভেঙে গেছে। প্রবল জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। কলকাতায় রাতে ঝোড়ো বাতাস বয়েছে এবং প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সকালেও বিমান চলাচল বন্ধ ছিল। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখাতেও ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগে কলকাতায় সাজিব নামে ৫১ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সাজিবের ছেলে বন্ধুর বাড়িতে আইপিএল ফাইনাল খেলা দেখতে যায়। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে তাকে বাড়ি নিয়ে আসতে যান সজিব। বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় তিনি একটি বাড়ির নিচে আশ্রয় নেন। তখনই তার ওপর বাড়ির কার্নিশ ভেঙে পড়ে ও তার মৃত্যু হয়।

সোমবার সকালে বৃষ্টি একটু কমলেও কলকাতার অনেক রাস্তায় পানি জমে আছে। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, “মোট ৫২টি গাছ ভেঙে পড়েছে। কয়েকটি রাস্তায় পানি জমে আছে। এখন বৃষ্টি কমলেও পরে আবার হতে পারে। ক্যামাক স্ট্রিটে একটি পাঁচিল ভেঙেছে।”

কলকাতা থেকে গৌতম হোড় বলেন, “রবিবার বিকেল থেকেই কলকাতায় বৃষ্টি শুরু হয়। রাত যত বাড়ে ততই বৃষ্টির দাপট বাড়ে। শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়া। রাত ১০টার পর থেকে ঝড় ও বৃষ্টি প্রবল হয়। গভীর রাত পর্যন্ত ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডব চলতে থাকে। সোমবার সকালেও আকাশ পুরো মেঘলা। ঝোড়ো হাওয়া থেমেছে। তবে মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে।”

আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে, এখন ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে রিমাল। তবে এর প্রভাবে কলকাতায় ১৪৪ মিলিমিটার, ডায়মন্ড হারবারে ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় রিলামের তাণ্ডব ছিল সবচেয়ে বেশি। প্রবল বৃষ্টি ও ঝড় হয়। বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়েছে। বাড়ি ভেঙেছে।

ডিডাব্লিউর প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ জানিয়েছেন, রবিবার দীঘা ও আশপাশের সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠে। সোমবার সকালেও সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস আছে। রবিবার দুপুরের পর থেকে সমুদ্রের পার খালি করে দেওয়া হয়। কাউকে আর আসতে দেওয়া হয়নি। সোমবার সকালে তাদের আবার সমুদ্রের কাছে আসতে দেওয়া হয়। তবে কাউকে সমুদ্রে নামতে দেওয়া হয়নি বা কাছে যেতে দেওয়া হয়নি।

সকালেও ঝড়ো হাওয়া ছিল বকখালির ফ্রেজারগঞ্জে। সারারাত ঝড় ও বৃষ্টি হয়। সকালে কিছুক্ষণ বৃষ্টি থামলেও পরে আবার তা শুরু হয়। বেশকিছু গাছ ভেঙেছে। মিটার ঘর ভেঙেছে। তবে যেহেতু মানুষকে সরকারি আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাই তারা সেখানে নিরাপদে ছিলেন।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত