রাসেলস ভাইপার নিয়ে ছড়িয়ে পড়া তথ্যের বেশিরভাগই গুজব

বুলেটিন ডেস্ক

বিষধর রাসেলস ভাইপার দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার গুঞ্জনে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সাপের ভয়ে ধানকাটার শ্রমিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না অনেক এলাকায়। আবার অনেক জায়গায় রাসেলস ভাইপার মনে করে নির্বিশ ঘরচিতিসহ নির্বিচারে সাপ মেরে ফেলছে মানুষ। ফলে বাস্তুসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বেসরকারি সংস্থা ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ইফতিকার মাহমুদ সাপ নিয়ে কাজ করছেন। দীর্ঘদিন সাপ উদ্ধারের সঙ্গে জড়িত থাকার পর এখন সাপ নিয়ে গবেষণা করছেন বায়োটেক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই শিক্ষার্থী। রাসেলস ভাইপার নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া তথ্যের বেশিরভাগই ভুল বলে জানান তিনি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হচ্ছে, রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ মানুষ দেখলে দূর থেকে তেড়ে এসে কামড় দেয়। এই সাপের কোন এন্টিভেনম নেই বাংলাদেশে এবং মৃত্যুর হার ৮০ শতাংশের বেশি। তবে এইসব তথ্য ভিত্তিহীন দাবি করে ইফতেখার মাহমুদ বলেন, কিছু নির্বিষ সাপ আছে যারা আত্মরক্ষার জন্য কিছুদূর তেড়ে আসে। যেহেতু তাদের বিষ নেই তাই ভয় দেখিয়ে তাঁরা আত্মরক্ষা করতে চায়। তবে রাসেলস ভাইপার তেড়ে এসে কামড় দেয় না। এই সাপ খুবই ধীরগতির এবং একটানা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারে না। শরীর ভারী হওয়ায় তাঁরা তেড়ে এসে কামড় দেয় এই তথ্য সঠিক নয়।

তিনি বলেন, রাসেলস ভাইপার খুব দ্রুত কামড় দিতে পারে। এত দ্রুত যে হয়তো আপনি বুঝবেনই না যে কামড় খেয়েছেন। তবে এজন্য আপনাকে সাপটির খুবই কাছে যেতে হবে। যদিও রাসেলস ভাইপার ভয় পেলে জোরে শো-শো শব্দ করে আপনাকে সতর্ক করবে। তারপরও আপনি সাপটির কাছে গেলে বা ভুলবশত তাঁর গায়ে পা পড়লে কামড় দিতে পারে।

রাসেলস ভাইপারের এন্টিভেনম নেই এবং খুব দ্রুত মানুষ মারা যায় এই তথ্য সঠিক নয় জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে সব বিষধর সাপ রয়েছে তাঁর মধ্যে সবচেয়ে কম সময় পাওয়া যায় কোবরা (গোখরা) এবং ক্রেইটের (কালাচ বা কেউটে) কামড়ে। আর এই সাপের বিষের তীব্রতা রাসেলস ভাইপার থেকে বেশি। একইসঙ্গে রাসেলস ভাইপারের বিষের এন্টিভেনম বাংলাদেশে রয়েছে। দ্রুত হাসপাতালে গেলে বেশিরভাগ রোগীই বেঁচে যাবেন বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের একটি জরিপের কথা উল্লেখ করেন তিনি। জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৩ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে রাসেলস ভাইপারের কামড়ে দুইশতাধিক মানুষ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। এদের মধ্যে ৩০ শতাংশ মানুষ মারা যান। তবে এদের বেশিরভাগই মারা গেছেন দেরিতে হাসপাতালে আসার কারণে।

তিনি বলেন, রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে হেমাটক্সিন বিষ থাকে। এটা রক্তকণিকা নষ্ট করে দেয়। এতে কিডনির মতো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ নষ্ট করে দেয়। ফলে এর চিকিৎসাটা দীর্ঘমেয়াদি। এই সাপের কামড় দিলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে যেতে হবে। সাধারণত বলা হয়েছে থাকে এই সাপের কামড়ের ১০০ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে যেতে হবে তবে ইফতিখার মাহমুদ মনে করেন এর থেকেও কম সময়ে হাসপাতালে যাওয়া উচিৎ। তিনি বলেন, আমি বলব যদি ১ ঘণ্টার মধ্যে যাওয়া সম্ভব হয় তবে এর মধ্যেই যেতে হবে। যদি ৫ মিনিটে যাওয়া সম্ভব হয় তবে ৫ মিনিটের মধ্যেই হাসপাতালে যেতে হবে। অর্থাৎ কোন সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।

রাসেলস ভাইপার ঢাকায় চলে আসছে এমন দাবি করা হলেও তিনি জানালেন ভিন্ন কথা। তাঁর মতে, ঢাকার অদূরে থাকা নদীর আশেপাশে রাসেলস ভাইপার থাকতে পারে তবে জনবসতির ভেতর এই সাপ আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

বাস্তুসংস্থানে সাপের গুরুত্ব অপরিসীম জানিয়ে তিনি বলেন, সাপ এমন জায়গায় যেতে পারে যেখানে অন্য প্রাণী যেতে পারে না। পরিবেশে সাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বিচারে মানুষের এই সাপ হত্যা পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলত পারে উল্লেখ করে গুজব না ছড়িয়ে সতর্ক থাকা পরামর্শ তাঁর।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত