প্রিয় মানুষটির সঙ্গে কাটানো আগামী দিনগুলো কতটা ভালবাসাপূর্ণ হতে পারে তার একটা ছোট্ট মহড়ার নাম ভ্যালেন্টাইন’স ডে!
অনিশ্চিত সময়ের ঘূর্ণিপাকে কাজের ফাঁকে একসঙ্গে কিছু ভালো সময় কাটানোটা প্রতিটি সম্পর্কের জন্যই পরম পাওয়া।
ভালো লাগার বিমূর্ত অভিজ্ঞতাগুলোর আকর্ষণ গুরুতর আর্থিক সংকটেও যেন উপেক্ষিত হওয়ার নয়। বিশেষ করে প্রিয়জনের হাসিমুখের কাছে আর সবকিছু যেন গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে! নিয়ত-জীবিকার পেছনে ছুটতে গিয়ে হতাশাগ্রস্ত মনে প্রায় ভর করে বিতৃষ্ণা। সেখানে একটু ভিন্নভাবে কাটানো দিনগুলো শুধু প্রিয় কতক স্মৃতির জন্ম দেয় না। বরং বারবার মনে করিয়ে দেয় জীবনের প্রতিটি দিন কতটা মূল্যবান। এর মধ্যে প্রিয় মানুষটির সঙ্গে কাটানো আগামী দিনগুলো কতটা ভালবাসাপূর্ণ হতে পারে তার একটা ছোট্ট মহড়ার নাম ভ্যালেন্টাইন’স ডে।
বস্তুগত দিক থেকে উপহারটি ছোট-বড় যেমনি হোক না কেন, তার পেছনে সময় ও শ্রম দেওয়ার স্বতঃস্ফূর্ততা গড়ে দেয় সম্পর্কের মাপকাঠি। সেই সূত্রে চলুন, সাধ্যের মধ্যেই কিছু ভ্যালেন্টাইন’স ডে উপহার দেখে নেওয়া যাক।
প্রিয়জনের জন্য কম খরচে ১০টি ভ্যালেন্টাইন’স ডে উপহার
ঘর সাজানোর গাছ:
শুধু শোভা বাড়াতেই নয়, একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্যও অনেকে ঘর সবুজায়নের ব্যবস্থা করেন। অনেকেই তাদের কাজের টেবিল ও তার আশেপাশে জানালাকে সাজিয়ে তুলতে পছন্দ করেন ছোট ছোট গাছের টব দিয়ে। বিশেষ করে ঘৃতকুমারী বা অলভ্যেরা, স্নেক পাম, মাদার্স-ইন-লস টাঙ, রাবার গাছের মতো ইন্ডোর প্ল্যান্টগুলো মানসিক স্বাস্থ্যকেও উন্নত করে। শুধু চারার দিক থেকে এগুলোর দাম খুব বেশি নয়। মূল্যের তারতাম্যতা মূলত বিভিন্ন ধরনের টবের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। সেগুলোর মধ্যে বেশ সাশ্রয়ী হয় প্লাস্টিকের টবগুলো। গাছপ্রেমীদের জন্য অনায়াসেই এটি একটি সেরা উপহার।
চকলেট বা ক্যান্ডি:
বিশেষ দিনগুলো উদযাপনের ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকেই প্রিয় খাবারের প্রতিনিধিত্ব করে আসছে চকলেট। বিধায় বাজারগুলোতেও নানা উৎসবে বিভিন্ন রঙের আকর্ষণীয় মোড়কে পরিবেশন করা হয় চকলেট ও ক্যান্ডিকে। মোড়ক বা চকলেট বক্স নির্বাচন করা যায় প্রিয়জনের প্রিয় রঙের ভিত্তিতে।
উপলক্ষগুলো সাধারণত মিষ্টিমুখ করেই উদযাপন করা হয়। তাছাড়া খুব কম মানুষই আছেন, যারা মিষ্টি জাতীয় খাবার অপছন্দ করেন। তবে স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রেক্ষিতে ডার্ক চকলেট বা অপেক্ষাকৃত কম মিষ্টি বা ক্যালোরি সমন্বিত চকলেটগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ।
প্রিয় ভাবনার চিরকুট ভর্তি জার:
সবেমাত্র যারা সম্পর্কে জড়িয়েছেন শুধু তাদের জন্যই নয়, পরস্পরের প্রতি মন্তব্যগুলো পুরনো দম্পতিদের কাছেও মূল্যবান। এরকম ৪০ থেকে ৫০টি মন্তব্য প্রিন্ট করে সেগুলোকে ছোট চিরকুট বানিয়ে ভাঁজ করে উপহার দেওয়া যেতে পারে একটি মনোরম পাত্রে।
পাত্রটি কি উপাদানের তা মুখ্য নয়, তবে… কারুকার্যমন্ডিত করা গেলে ভালো। লেখাগুলো নির্দিষ্ট দূরত্বে রেখে প্রিন্ট করতে কয়েকটি কাগজ লাগতে পারে। অতঃপর প্রিন্ট করা কাগজগুলো সুষমভাবে কেটে নিয়ে ভাঁজ করে রাখতে হবে সেই জারে।
সাধারণ চতুর্ভুজাকৃতিতে না রেখে, ত্রিভুজ, পঞ্চভুজ বা ফুলের আকৃতিতেও কাগজগুলো কাটা যেতে পারে। তবে সেজন্য পরিকল্পিতভাবে লেখাগুলো প্রিন্ট করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রিন্ট না করে হাতে লিখলে আকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সহজ হবে, তবে সময়টা লেগে যাবে বেশি। যখন প্রিন্টিং-এর সুবিধা ছিল না তখনও অনেকে এই উপহার দিতেন, যেখানে পুরো প্যাকেজটা বানাতে বেশ সময় লেগে যেত।
চিরকুটের পরিমাণ থেকে জার যেন খুব বড় না হয়ে যায়। হস্তশিল্পে যাদের ভালো দখল তাদের জন্য এটি বেশ উপভোগ্য হবে।
ছবির কোলাজ:
রিলের যুগ পেরিয়ে স্মার্টফোনের উন্নত ক্যামেরার সময় এলেও আবেগ এতটুকু কমে যায়নি হাতে ধরে কাগুজে ছবি দেখার। প্রিয় মানুষের সঙ্গে কাটানো সেরা মুহূর্তগুলোর ছবি প্রিন্ট করে সেগুলোকে একসঙ্গে একটি বড় আর্টপেপারে আটকানো যেতে পারে। এখানে আর্টপেপারটিকে আয়তাকার না রেখে হার্ট শেপসহ নানান রূপ দেওয়া যায়। পুরো পোস্টারটিকে একটি ফটো স্টোরিতে রূপান্তর করা যেতে পারে সৃজনশীল ক্যাপশনের মাধ্যমে। এখানে ক্রমান্বয়ে সাজাতে হবে সম্পর্কের শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত তোলা সেরা ছবিগুলো।
এছাড়া ছবিগুলো বর্ণীল পিন দিয়ে যেকোনো ক্যানভাসে লাগালে বা রিবন দিয়ে বেধে ঘরের মাঝে টাঙালে তাতে আরও নান্দনিকতা যোগ হবে। এর একটি ভালো বিকল্প হতে পারে নানান আকৃতির ফটো ফ্রেমগুলো, যেগুলো মূলত কোলাজের জন্যই তৈরি করা হয়। এই ফ্রেমগুলোতে বসানোর জন্য ছবিগুলোও
হতে হয় ভিন্ন আকৃতির।
মজার ছবি আঁকা বা ভালবাসার বার্তা লেখা কুশন
ভালবাসা দিবসের মজার একটি উপহার হচ্ছে সোফা ব্যবহারের কুশন বা বিছানায় ব্যবহারের ছোট্ট বালিশ। এগুলোতে থাকা হাস্যরসের ছবিগুলো বিশেষ দিবসে দারুণ কিছু মুহূর্তের অবতারণা করে। তখন পরিণত বয়সেও বেরিয়ে আসে বহুদিন ধরে সুপ্ত থাকা শিশুমন।
সেইসঙ্গে ছোট্ট একটি বার্তা অনাগত দিনগুলোতে নিয়ত মনে করাতে থাকে প্রিয়জনের কথা। বেশ আকর্ষণীয় উপহারে পরিণত হওয়ায় প্রতিটি উপলক্ষেই গিফট শপগুলো ভরে উঠছে এই কুশনগুলোতে। এমনকি কোনো কোনো ব্র্যান্ড কুশন কভারে গ্রাহকদের পছন্দের কথা লেখারও সুবিধা দিচ্ছে।
ভ্রমণ টোটে বা ব্যাগ:
দূরে কোথাও ঘুরতে গেলে এমন একটি ছোট্ট হাল্কা ব্যাগের প্রয়োজন হয়, যা থেকে খুব সহজেই দরকারের জিনিসটি বের করে নেওয়া যায়। এগুলো অনেক ভ্রমণপিপাসুরাই তাদের পরিধেয়ের সঙ্গে এমনকি বড় ব্যাগের অতিরিক্ত সংযোজন হিসেবেও ব্যবহার করে থাকেন। বাজারে এই সাইড ব্যাগগুলো অভিনব ও চিত্তাকর্ষক নকশায় পাওয়া যায়। এমনকি এতে গ্রাহকের নাম, নামের আদ্যক্ষর বা ছোট্ট বার্তার বুননেরও সুযোগ থাকে। দৈনন্দিন কাজে প্রতিটি স্থানে সঙ্গে রাখা এই উপহারটি দিবে প্রিয় মানুষটির সার্বক্ষণিক উপস্থিতির অনুভূতি।
প্রিয় খাবার রান্না করা:
প্রিয় মানুষটিকে তার প্রিয় খাবারটি রান্না করে খাওয়ানোর চেয়ে অমূল্য উপহার আর কিছুই নেই। ভোজন রসিক কাপলদের জন্য একান্তে সময় কাটানোর এটি সব থেকে সেরা উপায়। আর রান্না করা যদি দুজনেরই নেশা হয়ে থাকে, তাহলে দুজনের জন্যই এটি সেরা ভ্যালেন্টাইন ডে। কম্পিউটারে প্রিয় গানগুলোর লিস্ট চালিয়ে দিয়ে রান্নায় লেগে পড়ার সময়টা তখন হবে উৎসবের মতো। হঠাৎ করে চমকে দেওয়ার ব্যাপার না থাকলেও পরিকল্পিত এই উপহারে থাকবে স্মরণীয় করে রাখার মতো কিছু মুহূর্ত।
মুভি সন্ধ্যা:
নির্দিষ্ট কোনো বস্তুর বাইরে চিত্তবিনোদনের অভিজ্ঞতাও মনে রাখার মতো একটি উপহার। বিশেষ করে যারা মুভি দেখতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য প্রিয় জনরা (হরর, অ্যাডভেঞ্চার, কমেডি) বা তারকার মুভি দেখার কাছে অন্য সব বস্তুগত উপাদান ম্লান হয়ে যায়।
অনেক মুভিপ্রেমীরা তাদের প্রিয় সিনেমাটি বারবার দেখতেও কুণ্ঠা বোধ করেন না। তাদের জীবন ধারণের সঙ্গে অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে সিনেমা বা তারকার প্রচ্ছদ ও সংলাপ। এরকম মুভি পাগলকে মুগ্ধ করতে নতুন কোনো সিনেমা দেখতে চলে যাওয়া যেতে পারে সিনেমা হলে। এছাড়া পুরনো ছবি দেখতে ঘরটাকেও রূপান্তর করা যায় অস্থায়ী সিনেপ্লেক্সে।
প্রিয় বই ও বইমেলা পরিদর্শন:
ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহ, ফাল্গুনের শুরু, সেই সঙ্গে বইমেলার মাস; সব মিলিয়ে গোটা ফেব্রুয়ারি হচ্ছে উৎসবের মাস। বইয়ের পোকাদের জন্য এর থেকে প্রিয় সময় আর কিই বা হতে পারে! বইমেলা ঘুরে বেড়ানোর সময় ছোট বড় বিভিন্ন বয়সের মেয়ের মাথায় শোভা পায় ফুলের টায়রা আর হাতে লাল গোলাপ। বসন্তের শুরুতে এরকম ফুলেল শুভেচ্ছা প্রিয়জনের মুগ্ধতার নামান্তর।
সেই সঙ্গে আনন্দের পূর্ণতা দিতে পারে মেলা থেকে নতুন বইয়ের উপহার। আর ভক্তদের ভিড় ঠেলে প্রিয় লেখকের সঙ্গে দেখা করানো গেলে তা হয়ে থাকবে চির স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
বস্তুগত উপহারের পরিবর্তে অভিজ্ঞতামূলক….. উপহারগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ভালো লাগা এনে দিতে পারে একসঙ্গে কোথাও ভ্রমণে যাওয়া। গাছ-গাছালি ঘেরা পার্ক বা খোলা উদ্যানে একসঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো কোনো মূল্য দিয়েই বিনিময় করা যাবে না। এগুলোর মধ্যে বৈঠা নৌকায় প্রশস্ত কোনো বিলের মাঝে ভেসে চলা এক অপরিমেয় প্রশান্তির পরশ বুলাতে পারে। সেই সঙ্গে নৌকা ভর্তি ফুল, মাথায় ফুলের টায়রা ও হাতে লাল গোলাপ এক ভিন্ন মাত্রা দিতে পারে ভ্রমণের আনন্দে। আর প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়ানোর নেশা থাকলে এটি হতে পারে ভালবাসা দিবসের সেরা উপহার।
সাধ্যের মধ্যে প্রিয়জনকে খুশি করার এই ১০টি ভ্যালেন্টাইন’স ডে উপহার সাময়িক রোমান্টিকতার প্রতীক নয়। বরং এগুলো দীর্ঘস্থায়ী গভীর আবেগের বস্তুগত রূপ। কখনো তা আকার পায় গৃহস্থালির শোভাবর্ধক গাছে, চিরকুট ভর্তি পাত্র থেকে ফটোফ্রেমে, কুশন, প্রিয় খাবার বা বইয়ে। তবে প্রিয় মানুষটির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে তাকে দেওয়া সময়টি। অনিশ্চিত সময়ের ঘূর্ণিপাকে কাজের ফাঁকে একসঙ্গে কিছু ভালো সময় কাটানোটা প্রতিটি সম্পর্কের জন্যই পরম পাওয়া।