সরকার নগদে যে ভর্তুকি বা প্রণোদনা দিতো তা তুলে দিলেও অন্যভাবে পূরণ করা যায়। কোনো প্রকার বাছ-বিচার না করে হঠাৎ করে প্রণোদনা তুলে দিয়ে প্রতিযোগিতার সীমা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। সংকট হবেই।’
বলছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বাংলাদেশের বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজেরও ভাইস চেয়ারম্যান।
সরকার পোশাক খাতসহ বিভিন্ন সেক্টর থেকে প্রণোদনা কমানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত এ সময়ে অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শুধু গার্মেন্ট শিল্প থেকে নয়, সরকার অনেক কিছু্র ওপর থেকেই প্রণোদনা উঠিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার এমন সময়ে এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে, যখন বৈশ্বিকভাবে আমরা বিশেষ চাপের মধ্যে আছি। তৈরি পোশাকের অর্ডার কমছে। আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে দিন দিন রপ্তানি কমছে। কমে আসার নানা কারণ আছে। বিশেষত করোনা মহামারির এখনো প্রভাব রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্য উত্তেজনা, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, ডলার ক্রাইসিস তো আছেই।’
সরকার ডলার সংকটও দূর করতে পারছে না। ডলারের মার্কেট প্রাইস ১২৫ টাকা। আর আমরা রপ্তানিকারকরা পাচ্ছি ১০৯ টাকা। এভাবে চলতে থাকলে আমরা তো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবো না। ব্যবসা অন্য দেশে চলে যাবে। ভারত-পাকিস্তানে আমাদের বাজার চলে যেতে পারে।
‘সরকার নগদে যে ভর্তুকি বা প্রণোদনা দিতো তা তুলে দিলে অন্যভাবেও পূরণ করা যায়। কোনো প্রকার বাছ-বিচার না করেই হঠাৎ করে প্রণোদনা তুলে দিয়ে প্রতিযোগিতার সীমা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। সংকট হবেই।’
ডলার সংকট ব্যবসার নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে উল্লেখ করে বলেন, ‘কারণ এখানে ডলারের যে ক্রাইসিস তা আমাদের এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলছে। এ সময়ে প্রণোদনা কমিয়ে আনা বা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বিশ্বের অনেক দেশ আছে, যারা মধ্যআয়ের দেশে যাচ্ছে। অথচ, তারা এখনো ভর্তুকি তুলে নেয়নি। চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তুলে নিলেও অন্যভাবে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। যেমন- জ্বালানির ওপর দিচ্ছে, বিদ্যুতের ওপর দিচ্ছে। আমরা তো সে প্যাকেজও ঘোষণা করতে পারতাম। আমার তো মনে হয় না, সরকার কোনো ব্যবসায়ী বা সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার খুব বুঝে শুনে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে হয় না।’
অপ্রচলিত বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘অপ্রচলিত অনেক আইটেম যেমন প্লাস্টিকের ওপরও ভর্তুকি কমিয়েছে। মানুষ তো বিকল্পভাবে বাজার ধরার চেষ্টা করছে। আবার অপ্রচলিত বাজার যেমন- ভারত-অস্ট্রোলিয়ায় পোশাক শিল্প বিশেষ বাজার তৈরি করতে যাচ্ছিল। উৎপাদন ব্যয় না কমাতে পারলে ভারতের বাজার ধরা যাবে না। ভর্তুকি কমালে এ বাজার ধরা বড় মুশকিল হয়ে যাবে।’
‘সরকার স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যআয়ের দেশে যাচ্ছে ভালো কথা। আমরাও তো চাই। এ যাত্রায় সবারই অবদান আছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে ভর্তুকি দিয়ে আমাদের উৎপাদন ব্যয় কমানোতে সহযোগিতা করুক। ব্যবসায়ীরা ভালো না থাকলে অর্থনীতি ভালো থাকবে না। সরকার ব্যবসায়ীদের জন্য অন্যভাবে প্যাকেজ ঘোষণা করুক।’
সমস্যাটা কোথায় বাংলাদেশ ব্যাংক জানার কথা। ডলার প্রাইস ওপেন করা দরকার। কারণ এ সংকট থাকলে ডলার তো আসবে না। এর কারণ বের করুক। ব্যাংক ডলার পাচ্ছে না। হুন্ডি ব্যবসায়ীরা কিন্তু ঠিকই পাচ্ছে।
সরকার ডলার সংকটও দূর করতে পারছে না। ডলারের মার্কেট প্রাইস ১২৫ টাকা। আর আমরা রপ্তানিকারকরা পাচ্ছি ১০৯ টাকা। এভাবে চলতে থাকলে আমরা তো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবো না। ব্যবসা অন্য দেশে চলে যাবে। ভারত-পাকিস্তানে আমাদের বাজার চলে যেতে পারে।’
‘ডলারের প্রাইস যদি সমন্বয় না করা হয়, তাহলে সংকট কোনোভাবেই কাটবে না। রেমিট্যান্স আসছে না একই কারণে। কারণ তারা বাইরে ভালো রেট পাচ্ছে। কম রেটে বাংলাদেশে তারা ডলার পাঠাবে কেন? সরকার সাহস করে ডলার প্রাইসকে মার্কেট প্রাইসের সঙ্গে সমন্বয় করুক। হয়তো সাময়িক একটু সমস্যা হতে পারে। কিন্তু এক সময় এসে ঠিক হয়ে যাবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের দায় প্রসঙ্গে বলেন, ‘সমস্যাটা কোথায় বাংলাদেশ ব্যাংক জানার কথা। ডলার প্রাইস ওপেন করা দরকার। কারণ এ সংকট থাকলে ডলার তো আসবে না। এর কারণ বের করুক। ব্যাংক ডলার পাচ্ছে না। হুন্ডি ব্যবসায়ীরা কিন্তু ঠিকই পাচ্ছে।’
ডলার প্রাইস কেন সমন্বয় নেই তার দায় বাংলাদেশ ব্যাংকের। কেন কালোবাজারে যাচ্ছে? ব্যাংকগুলো ডলার ভিন্ন ভিন্ন রেটে কীভাবে বিক্রি করে তার ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সংকটের কারণে তো অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। প্রণোদনা তুলে দিচ্ছেন, আবার ডলারে মার খাচ্ছি। এভাবে তো ব্যবসা করা যাবে না।’