বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ড: অভিশ্রুতি নাকি বৃষ্টি, মারা যাওয়া মেয়েটি আসলে কে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

  • অভিশ্রুতি শাস্ত্রী হিসেবেই তাকে চেনেন ঢাকার বন্ধুরা।

অভিশ্রুতির এক বন্ধুর দাবি, তাকে তারা সনাতন ধর্মাবলম্বী হিসেবে জানেন। তিনি বলেন, ‘সে এই ধর্ম প্র‍্যাকটিস করে। ওর জীবনে অনেক তথ্য আছে যেগুলো আজ জানতে পেরেছি। তবে সাবুরুর আলম ওর বাবা এটাই মনে হচ্ছে।

রাজধানীর বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া এক তরুণীর নাম ও পরিচয় নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। পরিবার বলছে, তিনি মুসলিম ধর্মের। অথচ ঢাকায় তার পরিচয় ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী হিসেবে।

বেইলি রোডের বহুতল গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে বৃহস্পতিবার রাতে আগুনে পুড়ে যে ৪৬ জনের প্রাণ গেছে এই নারী তাদের একজন। নাম ও পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন থাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিচয় স্পষ্ট শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত মরদেহ হস্তান্তর করা হবে না।

শুক্রবার গণমাধ্যমে ২৪ বছর বয়সী এই নারীর মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশ হয়, এতে তার নাম জানানো হয় অভিশ্রুতি শাস্ত্রী। তবে মারা যাওয়া তরুণীকে মেয়ে দাবি করা সাবুরুর আলম সবুজ হাসাপতালে এসে বিকেলে বলেছেন, তার মেয়ের নাম বৃষ্টি খাতুন।

এই ছবি সঙ্গে করে এনেছেন সাবুরুর আলম সবুজ

অভিশ্রুতি নাকি বৃষ্টি, মারা যাওয়া মেয়েটি আসলে কে
এই ছবি সঙ্গে করে এনেছেন সাবুরুর আলম সবুজ
রমনা কালী মন্দিরের সভাপতি উৎপল সাহা নিউজবাংলাকে বলেন ‘অভিশ্রুতিকে আমরা আট মাস ধরে চিনি। সে সনাতন ধর্ম প্র‍্যাকটিস করে এবং এই আট মাসে সে নিয়মিত আমাদের মন্দিরে আসতো।’

তার বাবা দাবি করছেন অভিশ্রুতি মুসলিম-এই প্রশ্নে উৎপল বলেন ‘আমরা তাকে সনাতন বলেই জানি। সে যেখানে চাকরি করতো সেখানেও তার ডকুমেন্টস সনাতন ধর্মাবলম্বী দেয়া। তার বাড়ি কলকাতায় এবং এখানে কুষ্টিয়ায় একটি পরিবার তাকে দত্তক নিয়েছে।’

তাহলে অর্থের ঘোষণা দেয়ার পরই এটা করছে কি?- এই প্রশ্নে বলেন, ‘কোনো স্বার্থে করতেই পারেন। কারণ যতটা জানি তার মা-বাবা ভারতে থাকেন। সে সাংবাদিকতা এবং লেখালিখির সঙ্গেও অভিশ্রুতি নামেই পরিচিত।’

তবে সাবুরুর আলম সবুজ বলেন, ‘আমার মেয়ের নাম বৃষ্টি খাতুন। সে মুসলিম।’

সাবুরুর আলমের বক্তব্য

সাবুরুর আলম সবুজ বলেন, মেয়ের সঙ্গে শেষ তিনদিন আগে কথা হয়েছে। মেয়ের এক বন্ধু আমাকে আজ দুপুরে ফোন করে জানিয়েছে।

মেয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী এটা আপনি জানতেন- এই প্রশ্নে বলেন, ‘আমি জানতাম না। সে শুধু বলেছিল- আমি লেখালিখি করি। তাই অভিশ্রুতি নাম ব্যবহার করতে চাই। ধর্ম যদি সে পরিবর্তন করে থাকে সেটা আমি জানি না। আমি তার সাথে কথা কম বলতাম।’

সাবুরুর আলম সবুজ

মা এখনো জানেন না

তার মা কি আসছেন- এমন প্রশ্নে সাবুরুর আলম বলেন, ‘আমি ওর মাকে জানাইনি। বলেছি, তেমন কিছু হয়নি। ওর ভাই-বোনদের জানানো হয়েছে। কেউ আসছে না। আমরাই বৃষ্টিকে নিয়ে যাব ছাড়া পেলে।’

এনআইডির সঙ্গে অমিল

বাসা থেকে পাঠানো অভিশ্রুতির (বৃষ্টি) এনআইডির ছবির সঙ্গে মিল পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি তার সহকর্মী নুপুরের। তিনি বলেন, ‘কিছুটা মিল থাকলেও এটা অভিশ্রুতি না।’

এদিকে এনআইডিতে তার বাবার নাম লেখা হয়েছে সবুজ শেখ।

এনআইডিতে ভিন্ন নাম

বন্ধুরা যা বলছেন

অভিশ্রুতির এক বন্ধুর দাবি, তাকে তারা সনাতন ধর্মাবলম্বী হিসেবে জানেন। তিনি বলেন, ‘সে এই ধর্ম প্র‍্যাকটিস করে। ওর জীবনে অনেক তথ্য আছে যেগুলো আজ জানতে পেরেছি। তবে সাবুরুর আলম ওর বাবা এটাই মনে হচ্ছে।’

সৈকত মজুমদার নামে অভিশ্রুতির বন্ধু বলেন, ‘অভিশ্রুতিকে আমি গত পরশু বাসায় পৌঁছে দিয়েছি। সে বলেছে সে ইন্ডিয়ান। বাড়ি বেনারশে। খুব সাবলীল হিন্দি বলছিল। তার কথাবার্তায় আমার পুরো ইন্ডিয়ান মনে হয়েছে। সে এটাও বলেছে ইন্ডিয়া থেকে এসেছে কাজে।

‘সাংবাদিকতার সূত্রে খুলনা, পটুয়াখালী গিয়েছে। আবার ইডেনে পড়তো। সে বাংলাদেশে তার পরিবার নিয়ে কিছু বলেনি। কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও আমি তার ব্যাপারে জানতে চাইনি।’

একটি সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া থেকেই আরেকটি পরিবার আসছে বৃষ্টিকে সন্তান হিসেবে দাবি করে। তবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য এখনো জানা যায়নি।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত