বুয়েট কি পাকিস্তান যে ভিসা-পাসপোর্ট নিয়ে যেতে হবে: ছাত্রলীগ

ঢাবি প্রতিনিধি

বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘প্রশাসনের প্রতি আমাদের আল্টিমেটাম- অনতিবিলম্বে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি চালু করতে হবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। আর জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) মধ্যরাতে বহিরাগতদের নিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি প্রবেশ করেছেন অভিযোগ করে তিনদিন ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে যাচ্ছেন।

এবার সেই রাতে বুয়েট ক্যাম্পাসে সেই রাতে প্রবেশের বিষয়টি স্বীকার করে সংশ্লিষ্টদের প্রতি প্রশ্ন রেখেছেণ ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘বুয়েট কি পাকিস্তান যে ভিসা-পাসপোর্ট নিয়ে সেখানে প্রবেশ করতে হবে? বুয়েটে প্রবেশের জন্য কাদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে?

‘দেশের নাগরিক হিসেবে যে কোনো জায়গায় যাওয়ার অধিকার আমার রয়েছে। সংবিধান আমাদেরকে যে অধিকার দিয়েছে সেটিকে আপনার ঠুনকো বানিয়ে দেবেন আর আমরা মেনে নেব- এই আশা যারা করছেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।’

রোববার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে ছাত্রলীগ সভাপতি এসব কথা বলেন।

‘মৌলবাদী গোষ্ঠীর কালো ছায়া থেকে মুক্ত করে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে এবং বুয়েট কর্তৃক গৃহীত সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার পরিপন্থী শিক্ষাবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে’ এই সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্রলীগ।

সমাবেশ শুরুর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল এবং ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ইউনিট থেকে মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা শহীদ মিনারে জড়ো হন।

‘মৌলবাদের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘শিবিরের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দিতে শহীদ মিনারের দিকে আসেন নেতা-কর্মীরা।

সমাবেশে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘আমি অনেকবার বুয়েটে গিয়েছি। কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য যাইনি। সেদিন সেখানে আমার যাওয়ার কথাও ছিল না। তবে সেই রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন পরিচিতের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে দুই মিনিট দাঁড়িয়েছি। আর বৃষ্টি চলে আসায় ক্যাফেটেরিয়ার দিকে যাত্রা করেছি। এটি করার জন্য কি অনুমতি নিতে হবে? কাদের কাছ থেকে অনুমতি নেব?

‘এটিকে বলা হচ্ছে অনুপ্রবেশের চেষ্টা। কিসের অনুপ্রবেশ? বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রবেশ করে আর পথ দেখায়। অনুপ্রবেশের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।’

ছাত্রলীগের আল্টিমেটাম:

হলের সিট বাতিল হওয়া ছাত্রলীগ সদস্য ইমতিয়াজ রাব্বিকে নিয়ে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ১৭ ও ২৬ মার্চের কর্মসূচি পালন করাই আমাদের ইমতিয়াজ রাব্বির অপরাধ। মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়ে গেছে। ইমতিয়াজ রাব্বির যে সিট বাতিল করা হয়েছে সসম্মানে তাকে হলে বরণ করে নিতে হবে। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার এই নাটক পুরো বাংলাদেশ থেকে বন্ধ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আমাদের আল্টিমেটাম- অনতিবিলম্বে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি চালু করতে হবে। যে আইন আপনারা তৈরি করেছেন সেটি কালো আইন। বুয়েটে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।

‘জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত রয়েছে তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলার জন্য যাদেরকে সামাজিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

বুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান:

ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতিতে কিছু নেতিবাচক দিক আছে। কিছু নেগেটিভ কম্পোনেন্ট এখানে প্রবেশ করেছে। সেটি আমরা জানি। কিন্তু এই নেতিবাচক ছাত্র রাজনীতি পরাজিত করার মাধ্যম হচ্ছে আরও ভালো রাজনীতি। আর বুয়েট শিক্ষার্থীদের এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে।

‘বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির কাঠামো কী হবে সেটি বুয়েটের শিক্ষার্থীরাই গ্রহণ করবে। কিন্তু অবশ্যই সেখানে ছাত্র রাজনীতি থাকতে হবে।

‘আমরা চাই বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিকে পথ দেখাবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আমরা চাই এই ছাত্র রাজনীতিকে আপনারা আরও ইনক্লুসিভ, আরও আধুনিক করবেন।’

বুয়েট শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আপনারা বলতে পারেন ছাত্র রাজনীতিতে র‍্যাগিং কালচার, ভাই কালচার আর গেস্টরুম কালচার আছে। এবার আপনারা আসুন। আপনারা ঠিক করুন ছাত্র রাজনীতির মাপকাঠি। আপনারা আমাদের পথ দেখান। তরুণ প্রজন্ম যে পথ দেখায় ছাত্রলীগ সবসময় সে পথেই তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।’

বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঋদ্ধ করেছে ছাত্রলীগকেও:

সমাবেশে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আবরারের মৃত্যু আমাদেরকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। কিন্তু একটা অন্যায় ঘটনার প্রতিকার করতে গিয়ে আরও নানা ধরনের অন্যায় করা হচ্ছে। রাব্বিকে সামাজিকভাবে ভিকটিম ব্লেমিং করা হচ্ছে। এর দায় তাদেরকে অবশ্যই গ্রহণ করে এর সুন্দর সমাধান বের করতে হবে।’

ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘বুয়েট শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে সে আন্দোলন আমাদেরকে ঋদ্ধ করেছে। ঋদ্ধ করেছে এভাবে যে, দাপটের রাজনীতি, ক্ষমতার রাজনীতি এটি কোনো রাজনীতি নয়।

‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার স্পর্ধা বুয়েট শিক্ষার্থীদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। সেই স্পর্ধাকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গভীরভাবে ধারণ করে। সেটি ধারণ করে আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাই, বুয়েটকে যে অপরাজনীতির রাজধানী হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে সেটিকে আপনারা ধূলিসাৎ করে দিন।’

বুয়েটে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ছাত্রলীগের শ্রদ্ধা:

এদিকে সমাবেশ শেষে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা হেঁটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বুয়েটের শহীদ মিনারে এসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তবে এ সময় তারা বুয়েট ক্যাম্পাসে কোনো স্লোগান দেননি। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষেই তারা ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে আসেন।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত