শনিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে উন্নয়ন সংক্রান্ত সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা ভারত থেকে আসা পেয়াঁজ খাবেন, আপনাদের নেত্রী ভারত থেকে আসা শাড়ি পরবেন, ভারত থেকে আসা গরুর মাংস দিয়ে ইফতার ও সেহরি খাবেন, ভারতে চিকিৎসা নিতে যাবেন, আবার আপনারাই ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেবেন- এগুলো হিপোক্রেসি। আপনাদের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের বাজার অস্থিতিশীল করে পণ্যের মূল্য বাড়ানো।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশে ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে অনেক পণ্যই ভারত থেকে আসে। ভারতের সঙ্গে আমাদের হাজার হাজার কিলোমিটার সীমান্ত এবং কিছু সীমান্ত বাণিজ্যও হয় বৈধভাবে। আসলে বিএনপির ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাকের উদ্দেশ্য দেশের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলা ও দ্রব্যমূল্য বাড়ানো।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা ভারত থেকে আসা পেয়াঁজ খাবেন, আপনাদের নেত্রী ভারত থেকে আসা শাড়ি পরবেন, ভারত থেকে আসা গরুর মাংস দিয়ে ইফতার করবেন, সেহরি খাবেন, ভারতে চিকিৎসা নিতে যাবেন, আবার আপনারাই ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেবেন- এগুলো হিপোক্রেসি ছাড়া আর কিছু নয়। আপনাদের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের বাজার অস্থিতিশীল করে পণ্যের মূল্য আরও বাড়ানো।’
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চট্টগ্রাম জেলায় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে বিএনপিসহ কয়েকটি দল ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া সম্পর্কে সাংবাদিকরা সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ভারতীয় পণ্য বর্জনের যারা ডাক দিয়েছে, তাদের সঙ্গে শামিল হয়ে রিজভী সাহেব নিজের পরনের শালটিও জ্বালিয়ে দিয়েছেন। শালটি তিনি ভারত থেকে নাকি বঙ্গবাজার থেকে কিনেছিলেন আমি জানি না।’
সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছে জিম্মি জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতবার যখন এমভি জাহান মনি হাইজ্যাক হয়েছিল তাদেরকে মুক্ত করতে একশ’ দিন সময় লেগেছিল। এখন যত দ্রুত সম্ভব তাদেরকে মুক্ত করার চেষ্টাই আমরা করছি। জিম্মি নাবিক এবং জাহাজের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেভাবেই আমরা উদ্ধার করার চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, জাহাজের বিপুল পরিমাণ কয়লা রয়েছে। কয়লা একটি দাহ্য পদার্থ। সুতরাং এমন কিছু করা যাবে না যাতে করে দাহ্য পদার্থ হুমকির সম্মুখীন হয়, জাহাজের ক্ষতি হয়। সেভাবেই আমরা এগুচ্ছি এবং যারা জাহাজটি হাইজ্যাক করেছে, তারা ইতোমধ্যে মালিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এ ব্যাপারে আমাদেরকে সহযোগিতা করছে। আপনারা জিম্মি নাবিকদের পরিবারের সঙ্গে কথা বললে জানতে পারবেন তারাও অনেকটা আশ্বস্ত। আশা করছি, আমরা সহসাই নাবিকদেরকে উদ্ধার করতে পারব।’
চট্টগ্রামের উন্নয়ন সমন্বয় সভায় জলাবদ্ধতা প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং জলাবদ্ধতা প্রকল্পের সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘প্রকল্প শেষ হতে আরও আড়াই বছর বাকি আছে। এই আড়াই বছর সময়ের মধ্যে জনগণের যাতে কোনও ভোগান্তি না হয় সেটির ওপর গুরুত্ব দিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। একইসঙ্গে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার পর যাতে নিয়মিতভাবে মেনটেনেন্স করা হয় সেটিকেও গুরুত্ব দিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজ (শনিবার) চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বে-টার্মিনালের জন্য ইতিমধ্যে পাঁচশ’ একর জায়গা প্রধানমন্ত্রী বিনামূল্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছেন। আরও তিনশ’ একরের বেশি জায়গা তারা পাবে। সেটির জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ আবেদন করেছে। ইতোমধ্যে ডিপি ওর্য়াল্ড এবং সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটির সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর এমওইউ স্বাক্ষর করেছে।
‘এখানে তিনটি ভাগে কাজ হবে। একটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ করবে। আরেকটি সিঙ্গাপুর বন্দর কর্তৃপক্ষ করবে এবং অপর একটি ডিপি ওয়ার্ল্ড করবে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানও সেখানে যুক্ত হচ্ছে। এটি একটি বড় অগ্রগতি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বে-টার্মিনাল হলে সেটি চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে আরও বড় একটি নতুন বন্দর হবে। এই বে-টার্মিনাল দিয়ে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে আমরা পণ্য সরবরাহ করতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা বন্ধ এবং যানজট নিরসনসহ সার্বিক অনেক বিষয় নিয়েও সমন্বয় সভায় আমরা আলোচনা করেছি।’
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খান, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, মহিউদ্দিন বাচ্চু, এম এ ছালাম, এম এ মোতালেব সিআইপি, বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, ডিআইজি নুরে আলম মিনা, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।