মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠি আরকান আর্মির (এএ) চলমান সংঘর্ষে চরম অস্থিরতা ও আতঙ্কে কেটেছে এপারের সীমান্তে বসবাসকারীদের মাঝে। গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়ায় আতঙ্কে সীমান্ত থেকে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে। বিশেষ করে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রু এবং উখিয়া পালংখালী ইউনিয়নের বটতলী, রহমতের বিল এবং টেকনাফের উলুবনিয়া সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারাই ছিলেন সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে। তবে কয়েকদিন ধরে ওপারে গোলাগুলির শব্দ কমে আসায় সীমান্তের এপারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। ঘরছাড়া মানুষগুলো নিজ বাড়িতে ফিরেছেন। আর কৃষকরা আবারও মাঠে নেমেছেন।
তবে পরিস্থিতি শান্ত হলেও আতঙ্ক কাটছে না স্থানীয়দের মনে। এবার মিয়ানমারের আকিয়াব শহর ও রাজধানী ইয়াংগুনে কয়েক হাজার সেনা অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছে। তারা যেকোন সময় আরকান রাজ্যের অভিমুখে যেতে পারে—এমন খবরে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। আর সীমান্তে আরকান আর্মির সশস্ত্র অবস্থানও ভাবিয়ে তুলেছে তাদের মনে।
রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে আজ মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয়রা জানিয়েছেন, যদি মিয়ানমার সেনাবাহিনী আরকান রাজ্যের বেদখল হওয়া ঘাঁটি পুনরুদ্ধার অভিযানে নামে তবে আবারও বড় ধরণের সংঘাত তৈরি হতে পারে। অশান্ত হতে পারে সীমান্ত এলাকা। এছাড়া আরকান আর্মিদের লক্ষ্য করে যদি গুলি ছোঁড়া হয়, তবে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটতে পারে। অনেকক্ষেত্রে আরকান আর্মির সদস্যরাও বাংলাদেশের ভেতরে আশ্রয়ে চলে আসার সম্ভবনা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সীমান্তে কঠোর অবস্থানের বিকল্প নেই বলে দাবি করেছেন তারা।
উখিয়ার পালংখালী ব্যবসায়ী সমিতির নেতা কামাল উদ্দিন বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী আকাশ ও স্থলপথে একযোগে যদি বিদ্রোহী গোষ্ঠি আরকান আর্মির উপর হামলা করে, তবে আমাদের সীমান্তের পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
উখিয়ার পালংখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের চলমান সংঘর্ষ থামবে বলে মনে হয় না। কারণ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে আরকান আর্মি বিভিন্ন এলাকা দখলে নিয়েছে। জান্তাবাহিনী হয়তো তাদের হারানো এলাকা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবে। এ কারণে যেকোনো সময় সংঘাতের আশঙ্কায় স্থানীয়দের মাঝে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
থাইংখালির কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলির ঘটনায় কৃষকরা ভয়ে চাষ করা তো দূরের কথা, ঘরেও থাকতে পারেনি। প্রচণ্ড গুলির শব্দে শিহরে উঠেছি বারবার। কিন্তু সোমবার থেকে তেমন কোন গুলির শব্দ আমরা পাচ্ছি না। এ অবস্থায় কৃষকরা ধান চাষে মাঠে নেমেছে।
পালংখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এখন সীমান্ত পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। তাই লোকজনও বাড়ি ফিরছে আর কৃষকরা মাঠে নেমেছেন।
টেকনাফ হোয়াক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে আসলে বলা মুশকিল। তারপরও মিয়ানমারের ভেতরের পরিস্থিতি বিবেচনা করে সীমান্তের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।