ক্যামেরন গাজায় আরও মানবিক সহায়তা ঢুকতে দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান
আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে ব্রিটেন প্রস্তুত বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।
লর্ড ক্যামেরন বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ফিলিস্তিনিদের একটি রাজনৈতিক ভূমি দিতে হবে।
ওয়েস্টমিনস্টারে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বরূপ কেমন হবে তা নির্ধারণ করা যুক্তরাজ্যের দায়িত্ব।
লর্ড ক্যামেরন বলেন, দুই রাষ্ট্র সমাধানের বিষয়ে ফিলিস্তিনিদের একটি ‘অলঙ্ঘনীয় প্রক্রিয়ার’ বাস্তবায়ন দেখাতে হবে।
কনজারভেটিভ মিডল ইস্ট কাউন্সিলকে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘসহ অন্যান্য মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে আমরা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করব।’
তিনি বলেন, ‘এতে বিষয়টি বাস্তবায়নে সহায়তা হতে পারে।’
ক্যামেরন গাজায় আরও মানবিক সহায়তা ঢুকতে দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ এবং অন্যান্য দেশের পাঠানো মানবিক সহায়তা সীমান্তে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি ‘হাস্যকর’।
লর্ড ক্যামেরন বলেন, গত ৩০ বছর ইসরাইলের ব্যর্থতার গল্প, কারণ তারা তার নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, এই ব্যর্থতা স্বীকার করার মাধ্যমেই কেবল শান্তি ও অগ্রগতি হবে।
ব্রিটেন দীর্ঘদিন ধরে দুই রাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন করে আসছে, যেখানে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা পৃথক দেশে পাশাপাশি বসবাস করতে পারে।
লর্ড ক্যামেরন ইঙ্গিত দিয়েছেন, চূড়ান্ত শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে নয়, এই আলোচনার আগেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক ও কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিতে পারে ব্রিটেন।
একই সঙ্গে গাজা শাসন করতে সক্ষম ‘টেকনোক্র্যাট ও ভালো নেতাদের’ নিয়ে নতুন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে।
লর্ড ক্যামেরন বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণকে একটি রাজনৈতিক ভূখণ্ড দেখানো, যাতে তারা দেখতে পায় যে দুই রাষ্ট্র সমাধান এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে স্থায়ী অগ্রগতি হতে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের একটি দায়িত্ব আছে। আমাদের ভাবনা শুরু করা উচিত যে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র কেমন হবে, এতে কী থাকবে, এটি কীভাবে কাজ করবে এবং আমরা জাতিসংঘসহ অন্যান্য মিত্রদের সঙ্গে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করব।’
ক্যামেরন বলেন, ‘যা এই প্রক্রিয়াটিকে অলঙ্ঘনীয় করতে সহায়তা করবে।’
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তবে যে কোনো দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েলের সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে, এই গ্যারান্টি দিতে হবে যে হামাস ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ চালাবে না এবং এর (হামাসের) নেতারা গাজা ছেড়ে চলে যাবে।
তিনি বলেন, চুক্তিটি করা ‘কঠিন’ হবে, তবে অসম্ভব নয়।
গাজায় যুদ্ধের অবসানের চলমান প্রচেষ্টার বিষয়ে লর্ড ক্যামেরন বলেন, যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন এবং সমঝোতার আলোচনার বিষয়ে ‘আশার আলো’ দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এমন একটি পথ এখনও খোলা আছে, যা দিয়ে আমরা এ বিষয়ে সত্যিকার অগ্রগতি করতে পারি। এটি শুধু চলমান সংঘাতের অবসান ঘটাতে নয়, এমন একটি রাজনৈতিক সমাধান খোঁজার ক্ষেত্রেও সুফল আনতে পারে, যাতে কয়েক মাস শান্তির পরিবর্তে বছরের পর বছর শান্তি বজায় থাকে।’
তিনি বলেন, ‘এই বিরতিটিকে একটি টেকসই যুদ্ধবিরতিতে পরিণত করা’ আসল চ্যালেঞ্জ হবে।
লর্ড ক্যামেরন বলেন, ‘যদিও কাজটি কঠিন এবং অতীতে এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, তাই বলে আমরা হাল ছেড়ে দিতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘গত ৩০ বছর একটি ব্যর্থতার গল্প।’
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সবশেষে এটি ইসরায়েলের জন্য ব্যর্থতার গল্প, কারণ তাদের একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি ছিল, তাদের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে, তারা প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সুরক্ষা দেওয়াল (আয়রন ডোম) প্রভৃতিতে বিনিয়োগ করেছিল, কিন্তু তারা একটি রাষ্ট্র দিতে পারেনি। অথচ মানুষ সবচেয়ে বেশি যা চায়, প্রতিটি পরিবার যা চায়, যা হলো নিরাপত্তা।’
তিনি বলেন, ‘আর তাই গত ৩০ বছরের সব উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে গেছে।’
ক্যামেরন বলেন, ‘সত্যিকারের শান্তি ও অগ্রগতি তখনই আসবে যখন সেই ব্যর্থতাকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং এটা বুঝতে পারা যে শান্তি ও অগ্রগতির সুফল যুদ্ধে ফিরে যাওয়ার সুবিধার চেয়ে অনেক বেশি হবে।’