ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্য করতে জাতিসংঘে বিপুল ভোটে প্রস্তাব পাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়া ৯ দেশের অন্যতম যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে দেশটির নিরাপত্তা, সীমানা ও জেরুজালেমের ভবিষ্যৎসহ মূল সমস্যাগুলোর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে পূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বিরোধিতা করে যাবে। তবে একইসঙ্গে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পথ খুঁজতে দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে তারা।

ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের ১৯৪তম সদস্য হতে স্বীকৃতি দিয়ে সংস্থাটির সাধারণ পরিষদে বিপুল ভোটে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। প্রস্তাবে ফিলিস্তিনকে সদস্যপদ দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদে সুপারিশ করা হয়েছে।

শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রস্তাবটি উঠলে এ নিয়ে ভোটাভুটি হয়। ১৪৩ দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয় ৯টি দেশ। আর ভোটদানে বিরত ছিল ২৫টি দেশ।

বিপক্ষে ভোট দেয়া দেশগুলো হলো- ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, চেকিয়া, হাঙ্গেরি, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, পালাউ ও পাপুয়া নিউগিনি।

এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে দেশটির নিরাপত্তা, সীমানা ও জেরুজালেমের ভবিষ্যৎসহ মূল সমস্যাগুলোর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে পূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বিরোধিতা করে যাবে। তবে একইসঙ্গে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পথ খুঁজতে দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে তারা।

এর আগে ১৮ এপ্রিল জাতিসংঘেফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার প্রস্তাবেও ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

২০১২ সাল থেকে জাতিসংঘে পর্যবেক্ষক (সদস্য নয়) হিসেবে মর্যাদা পেয়ে আসছে ফিলিস্তিন।

ভোটের পর ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, প্রস্তাব পাস হওয়ায় এটাই প্রমাণ হয় যে, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও অধিকারের পক্ষে রয়েছে। একইসঙ্গে তারা দখলদার ইসরায়েলের বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবের ওপর এত দেশের সমর্থনের বিষয়টির কঠোর সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাড এরডান।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ ‘আধুনিক নাৎসিদের’ অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পুরস্কৃত করতে চাচ্ছে। ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দেয়ার সময় কেউ ৭ অক্টোবরের (হামাসের) হামলার ঘটনা বিবেচনায় নেয়নি।

তিনি আরও বলেন, আজকে যদি সাধারণ ভোটাভুটিই চূড়ান্ত রায় হতো তবে হামাস জিতে যেত। এতে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ হিসেবে কর্মকাণ্ড চালাতে হামাসকে সুযোগ করে দেয়া হতো।

ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের হোতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের একটি ছবি তুলে ধরে তিনি বলেন, ফিলিস্তিন স্বাধীন হলে এই লোকটি হবে দেশটির নেতা, যার লক্ষ্যই হচ্ছে ইহুদিদের বিনাশ করা।

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড বলেন, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার আগে আমাদের অবশ্যই ইসরায়েলের নিরাপত্তার বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে। ইহুদি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানে আসতে হবে। এতে ফিলিস্তিনিরাও তাদের নিজস্ব রাষ্ট্রে শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ পেতে প্রথমে সংস্থাটির ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাস হতে হয়। এরপর সেটি সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটির মাধ্যমে পাস হবে। তারপর প্রস্তাবটি আবার নিরাপত্তা পরিষদে তোলা হয়। এ সময় ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে সেটি আটকে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত