নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত বুয়েট শিক্ষার্থীরা, দাবিতে অনড়

বুলেটিন ডেস্ক

  • নিরাপত্তাহীনতার কারণে আজকের কর্মসূচি পালন করা হয়নি বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও হুমকি প্রদান করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সেখানকার আন্দোলনরতরা। নিরাপত্তাজনিত কারণে রবিবারের (৩১ মার্চ) নির্ধারিত কর্মসূচি পালন করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন তারা। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না চাওয়া মানেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মতাদর্শ থেকে দূরে সরে যাওয়া নয় উল্লেখ করে নিজেদের দাবিতে অনড় থাকার কথাও বলেছেন শিক্ষার্থীরা।

তারা বলেছেন, “আমরা শুধু চাই না, ক্ষমতার লোভ ও অপচর্চা আবারও এসে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ফেলুক। আমরা সব শিক্ষার্থীই গর্বের সঙ্গে দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার চেতনার চর্চা আমাদের অন্তরে লালন করি। আমরা হিযবুত তাহরীরের সম্পূর্ণ বিপক্ষে এবং কারও শিবিরসংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে তার বহিষ্কার চাই।”

রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় বুয়েটের ড. এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শিক্ষার্থীরা।

গত বুধবার মধ্যরাতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রবেশের প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার থেকে টানা আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। দ্বিতীয় দিনের মতো টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। পরে দলবেঁধে বুয়েট ক্যাম্পাসে যান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

রবিবার সকাল ৭টা থেকে বুয়েট শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে জড়ো হওয়ার কথা থাকলেও তারা সেখানে যাননি। পরে বিকেলে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। এতে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান তিন শিক্ষার্থী। বুয়েট ক্যাম্পাস রাজনীতিমুক্ত, অপশক্তির কবল থেকে মুক্ত থাকা এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে শিক্ষা কার্যক্রমে ফেরত যাবেন বলে জানানো হয়। তারা পরীক্ষাগুলোর নতুন তারিখ দেওয়ার আবেদন করেছেন বলেও জানিয়েছেন।

বুয়েটে কার্যক্রম চালাচ্ছে শিবির ও হিযবুত তাহরীর, অভিযোগ পাঁচ শিক্ষার্থীরবুয়েটে কার্যক্রম চালাচ্ছে শিবির ও হিযবুত তাহরীর, অভিযোগ পাঁচ শিক্ষার্থীর
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “বুয়েটে ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের পক্ষে আন্দোলনরত সব ব্যাচের সব শিক্ষার্থী আজ রবিবার নিরাপত্তাজনিত তীব্র শঙ্কার কারণে কেউ কোনো ধরনের সমাগম করেননি। বুয়েট শিক্ষার্থীদের মিথ্যা ট্যাগ দেওয়া, শিক্ষার্থীদের ছবি নাম-পরিচয়সহ পোস্ট করে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা গুরুতরভাবে বিঘ্নিত হয়, এমন সব অপপ্রচার চালানো হয়েছে।”

শিক্ষার্থীরা বলেন, “এমন পরিস্থিতিতে বুয়েট ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকা বুয়েটের শিক্ষার্থীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। এমনকি বুয়েট ক্যাম্পাসের বাইরেও শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। নিরাপত্তাজনিত এসব কারণে বুয়েট শিক্ষার্থীদের রবিবার ক্যাম্পাসে অবস্থান না নেওয়া মানে এই নয় যে বুয়েট শিক্ষার্থীরা তাদের ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের দাবি থেকে সরে এসেছেন।”

বুয়েটে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রমের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ক্যাম্পাসে তাদের কর্মকাণ্ড দেখা যায় বহিরাগতদের লাগানো বিভিন্ন পোস্টার, ই-মেইল বা প্রচারপত্র ইত্যাদির ভিত্তিতে। কারা এগুলো করেন, তাদের পরিচয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট নন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “এ জাতীয় অপশক্তির উত্থান যেন বুয়েটে না হয়, সেজন্য আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”

বুয়েটে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির বলা হয়, “যেসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শিবিরের কার্যক্রমে যুক্ত থাকার অভিযোগ আসছে, তাদের ঘটনাটি বুয়েটের বাইরে হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত এ ঘটনার বিষয়ে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ নেই৷ তবে অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাদের সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিতভাবে আহ্বান জানাই এবং এটি আমাদের পূর্ববর্তী একটি আন্দোলনের অন্যতম দাবি হিসেবে ছিল। আদালতে বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন এবং এই বিচারপ্রক্রিয়ার রায় সাপেক্ষে যদি এমন কোনো শিক্ষার্থীর শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়, আমরা তাৎক্ষণিক তাদের বহিষ্কারের দাবি জানাব।”

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, “বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের চর্চা, কমিটি দেওয়া, ক্যাম্পাসে শোডাউন, রাজনৈতিক সংগঠনের জনসমাবেশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রাজনীতিমুক্ত রাখার বিধি লঙ্ঘন। এছাড়া রাতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ যেখানে বুয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য নিষিদ্ধ, সেখানে রাত তিনটায় একটা রাজনৈতিক সংগঠনের সাংগঠনিক নেতাদের দলবলে কর্মসূচি করা অবশ্যই একটা স্বাভাবিক ঘটনা নয় এবং সাংগঠনিক রাজনীতির প্রভাবে ঘটা ঘটনা। দফায় দফায় প্রতিবাদ জানানোর পরও ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বুয়েটের শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক ক্যাম্পাসের ইচ্ছাকে সম্মান না করে ক্যাম্পাসে পুনরায় ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার নানা রকম উদ্যোগ নিয়েছেন। ক্রমাগত অসন্তোষ এখন তীব্র আন্দোলনে রূপ নিয়েছে শুধু একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস চাওয়ার দাবি থেকেই। আমরা শপথ করছি, সব অরাজনৈতিক ও নিষিদ্ধ সংগঠন থেকে বুয়েটকে মুক্ত রাখব। আমরা আবরার ফাহাদ ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।”

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, তাদের অবস্থান কোনো একক ছাত্রসংগঠনের বিরুদ্ধে নয়, বরং বুয়েট ক্যাম্পাসে দেশের সব ছাত্ররাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “ছাত্ররাজনীতির উপস্থিতি ছাড়াও সুস্থ নেতৃত্ব ও নৈতিকতা বিকাশের সব উপাদান ক্যাম্পাসে কয়েক বছর ধরে উপস্থিত ছিল এবং এতে নেতৃত্বচর্চায় শিক্ষার্থীরা তাদের উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছেন। বর্তমান বুয়েটে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ থাকায় নিজ নিজ প্রকৌশল ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণামুখী কাজে মনোনিবেশ করতে অনুপ্রাণিত হওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে৷ রাজনীতিমুক্ত বুয়েট ক্যাম্পাসে গত পাঁচ বছর এত সব সফলতার পরও ক্যাম্পাসকে নিয়ে নানা ধরনের অপবাদ দেওয়া কখনোই যৌক্তিক নয়।”

এতে বলা হয়, “বুয়েটের সব ব্যাচের সব শিক্ষার্থী সম্মিলিতভাবে দেশবাসীর সামনে এ কথা সৎসাহসের সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে বলতে চান, বুয়েটের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয়ী। প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে অঙ্গীকার ও প্রচেষ্টা, তার সঙ্গে বুয়েটের সব শিক্ষার্থীই একাত্মতা পোষণ করেন এবং নিজেদের সুযোগ্য প্রকৌশলী হিসেবে গড়ে তুলে তার জন্য অবদান রাখতে উদ্যমী।”

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত