রোজা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। ঈমান, নামাজের পর সুস্থ, স্বাভাবিক প্রাপ্ত বয়স্ক নারী পুরুষ সবার জন্য বাধ্যতামূলক ইবাদত হলো রমজান মাসের রোজা। প্রতিদিন সুবহে সাদিক থেকে নিয়ে সুর্যাস্ত পর্যন্ত পাহানার, স্ত্রী সহবাস, কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত বিধি-নিষেধ থেকে বিরত থাকাকে রোজা বলা হয়।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন — হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেনো তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পারো। (সূরা বাকারা, আয়াত, ১৮৩)।
রমজানের আগেই রমজানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করতেন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রিয়নবীর আমলের আলোকে তাই বলা যায় শাবান মাস হলো রমজানের প্রস্তুতি এবং অপেক্ষার মাস। একজন মুমিন এই মাসে রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতে রাখেন এবং হাদিসে বর্ণিত রজব ও শাবান মাসের বরকত সম্পর্কিত দোয়াটি পড়েন। এই মাসের গুরুত্বপূর্ণ রজনী শবে বরাত বা লাইলাতুম মুবারাকাহতে আল্লাহর রহমত কামনা করেন।
ইবাদতের ক্ষেত্রে নারী পুরুষ সবার বিধান একই রকম। তবে একজন নারী যেহেতু একটি পরিবারকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে প্রধান হিসেবে ভূমিকা পালন করেন তাই পরিবারের অন্যদের তুলনায় তাদের দায়িত্ব কর্তব্য বেশি থাকে। পবিত্র রমজান মাসে এই দায়িত্ব বেড়ে যায় কয়েক গুণ। দায়িত্বে কারণে রমজানে বেশিরভাগ সময় নারীদের ইবাদত পালন ব্যাহত হয়। রমজানের বরকত ও রহমত লাভ করা তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়।
নারীকে সহায়তা
এজন্য রমজানের রহমত, বরকত, নাজাত লাভের সুযোগ দানে পরিবারের পুরুষ এবং অন্য সবার উচিত নারীর কাজে সহায়তা করা। পবিরারের কাজ ভাগাভাগি করে নেওয়া।
আগে থেকেই কাজ গুছিয়ে নেওয়া
একই সঙ্গে রমজান আসার আগেই সাংসারিক কাজ গুছিয়ে নেওয়া উচিত নারীদের। এতে করে রমজানে নারীদের ওপর বাড়তি চাপ কমে যায়। আগে থেকে পরিকল্পনা করে রাখলে রমজানের কাজগুলো করতে বেগ পেতে হবে না। কারণ, সঠিক পরিকল্পনা ও সময়ের মূল্যায়ণ মানুষকে কাজ গুছিয়ে নিতে সহায়তা করে।
আমর ইবনে মায়মুন রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পাঁচ জিনিসের আগে পাঁচ জিনিসকে মূল্যায়ন করো। যৌবনকে মূল্যায়ন করো বার্ধক্যের আগে, সুস্থতা মূল্যায়ন করো অসুস্থতা আসার আগে, সচ্ছলতা মূল্যায়ন করো দারিদ্র্য আসার আগে, অবসর মূল্যায়ন করো ব্যস্ততা আসার আগে এবং জীবনকে মূল্যায়ন করো মৃত্যু আসার আগে। (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস, ১০২৪৮; মুস্তাদরাক হাকেম, হাদিস, ৭৮৪৬)
শাবান থেকেই ইবাদতের পরিবেশ ও রুটিন
শাবান মাস যেহেতু রমজানের প্রস্তুতির মাস, তাই একজন নারী শাবান মাসে ইবাদতের পরিবেশ তৈরি করে নিতে পারেন। রমজানে সংসারের কাজের সঙ্গে সঙ্গে ইবাদত পালনের রুটিন আগে থেকেই ঠিক করে নিতে পারেন। এতে করে ব্যক্তি এবং পরকালীন উভয় জীবনে সফল হতে পারবেন।
প্রিয়নবীর ভালোবাসায় শাবান মাস যেভাবে কাটাবেন
সাহাবিরা রমজানের প্রস্তুতি নিতেন যেভাবে
এ জন্য নারীকে রোজা, তারাবি, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজগার, তালিম-তারবিয়াত ও বিশ্রামের জন্য রুটিন তৈরি করে রাখতে হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সব কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তি তা-ই পাবে যা সে নিয়ত করবে। (বুখারি, হাদিস, ১)
কাজা রোজা থাকলে আদায় করে নেওয়া
বিগত রমজানের কাজ থাকলে শাবান মাসে কাজা রোজা আদায়ের মাধ্যমে নারীরা রমজানের প্রস্তুতি শুরু করতে পারেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, বিগত বছরের রমজানের রোজা আমার ওপর আবশ্যক থাকলে, নতুন বছরের রোজা আগমনের আগে শাবান মাসে আমি সে রোজাগুলোর কাজা আদায় করে ফেলতাম। (বুখারি, হাদিস, ১৯৫০)
শিশুদের আমলের প্রতি আগ্রহী করা
পরিবার গঠনে নারীর ভূমিকা সবথেকে বেশি। সন্তান মায়েদের কাছেই বেড়ে উঠে, তাদের দেখেই ভালো-মন্দ আচার-আচরণ শেখে। তাই নারীর উচিত শাবানের রমজানের প্রস্তুতি বিষয়টি তাদের বুঝানো। যেন তাদের মাঝে আগে থেকেই ইবাদতের আবহ তৈরি হয়। তারাও আমলের প্রতি আগ্রহী হয় আগে থেকেই।