শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি হয়ে যাওয়ায় এবং ভোগান্তি এড়াতে অনেকে পরিবার-পরিজনকে আগেই বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন, ফলে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বাড়ি ফেরার মিছিল দেখা যায়।
প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে রাজধানী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে নগরবাসী। নাড়ীর টানে তাই ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়ছে রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি হয়ে যাওয়ায় এবং ভোগান্তি এড়াতে অনেকে পরিবার-পরিজনকে আগেই বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন, ফলে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বাড়ি ফেরার মিছিল দেখা যায়। তবে এখন ভালো মানের বাসের টিকিট পাওয়াটা অনেকটাই কঠিন।
শুক্রবার সকালে গাবতলী, কল্যাণপুর ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের কাউন্টার ঘুরে দেখা যায়, আপনজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দে ভাগাভাগি করে নিতে অনেকেই রওনা হয়েছেন বাড়ির পথে। তবে ঢাকা ছাড়ার মানুষের মধ্যে নারী-শিশু ও শিক্ষার্থীদে সংখ্যা বেশি দেখা গেছে।
বাড়ির পথে থাকা অনেকে জানান, স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ায় শিশু এবং পরিবারে সদস্যদের আগেই পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। কর্মজীবীরা যাবেন ছুটি শুরু হলে।
সকাল সাড়ে ১০টা, গাবতলী বাস টার্মিনালে প্রবেশের আগে প্রধান সড়কে দাঁড়াতেই কানে এলো সেলফি পরিবহনের হেলপারদের হাঁকডাক, আরিচা ঘাট ২০০, আরিচা ঘাট ২০০।
এই পরিবহনের হেলপার রাজ্জাক বলেন, বৃহস্পতিবার আর শুক্রবার যাত্রী অনেক বেশি। আমাদের বাস আরিচা ঘাট পর্যন্ত চলে। আমাদের ভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা। যারা পরিবহনে টিকিট পাই না তারা আমাদের বাসে যায়। আমাদের রানিং বাস। যাত্রী ভরলে আমরা বাস ছাড়ি। আমাদের বাস ভরতে কখনো ২০ মিনিট আবার কখনো ৩০-৪০ মিনিটও লাগে।
গবতলী বাস টার্মিলানের ভেতরে গিয়ে দেখা যায় সাধারণ দিনের মতো বাস কাউন্টার থেকে তেমন একটা হাঁকডাক নেই। বাস সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ইদের আগের দিন পর্যন্ত বেশির ভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। তাই যাত্রী ডাকতে তোড়জোর কম।
চুয়াডাঙ্গাগামী পূর্বাশা পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের যাত্রীর চাপ শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে। আপাতত ইদ পর্যন্ত আমাদের টিকিট নেই। যেগুলো টিকিট আছে সেটা বিক্রি হবে না। এগুলো আমরা রেখে দিই আমাদের খুব পরিচিত মানুষ ও ভিআইপি যাত্রীদের জন্য।
জে আর পরিবহনের কাউন্টারে ম্যানেজার নয়ন বলেন, এখন আমাদের কোনো ঝামেলা নেই। এখনকার টিকিট সব আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। যাত্রীরা তাদের সময় অনুয়াযী চলে আসে আমরা গাড়িতে তুলে দিই। এখন পর্যন্ত আমাদের গাড়ির সিডিউল অনুয়াযীই চলছে।
তবে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়াগামী জামান এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের গাড়ি ফুল হয়নি, পেছনের দুই- তিন সিট ফাঁকা গেছে। আগামী ২-৩ দিনেরও সব টিকিট বিক্রি করতে পারিনি।
কথা হয় ঝিনাইদহগামী যাত্রী আসিফ মোস্তফা মিথুনের সাথে। তিনি বলেন, ঈদের আগে ঝামেলা হবে ভেবেই আগে ভাগেই পরিবার নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। আমার টিকিক ২ সপ্তাহেরও আগে কাটা ছিল।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই ঈদ এলেই বাসের টিকিট ডাবল হয়ে য়ায়। এটা বহন করা আমাদের কষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু নিরুপায় বলে আমরা বাধ্য হয়ে ডাবল দামেই টিকিট কিনি। সাধারণ দিনে যেই এসি বাসে আমি ৫০০-৬০০ টাকায় যাই শুক্রবার সেই সিটের মূল্য ১২০০ টাকা। এখন আমি আমার পরিবারের চার সাদস্য মিলে যাচ্ছি এখানে আমার প্রায় ৫ হাজার খরচ হয়ে গেছে। সরকারের এখানে হস্তক্ষেপ করা উচিত।
কুষ্টিয়াগামী যাত্রী রাজিয়া সুলতানা বলেন, ভোগান্তি এড়াতে আমি আর আমার ছেলে আগেই চলে যাচ্ছি। আমার জামাইয়ের ছুটি শুরু হবে ইদের আগের দিন, তাই তিনি আমাদের সাথে যাচ্ছেন না।
কথা হয় মাগুরাগামী যাত্রী রাজু আহম্মেদের সাথে। তিনি বলেন, ঝামেলা এড়াতে আগেই টিকিট কেটে রেখেছিলাম। এখন আরামে বাড়ি চলে যাব। তবে এই আরাম ২ বছর আগেও ছিলো না। আগে বাড়ি যেতে আরিচা ঘাটে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো। এখন পদ্মা সেতু হওয়াতে অনেক গাড়ি ওইদিক দিয়ে চলে যাচ্ছে। তাই আরিচা ঘার এখন অনেক ফাঁকা।
গাবতলীর মতো সকালে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডেও যাত্রীদের ব্যাপক যাত্রী উপস্থিতি দেখা গেছে। প্রতিটা কাউন্টারেই যাত্রীতে পরিপূর্ণ ছিল। আর অতিরিক্ত যাত্রীদের জন্য ফুটপাত দেয়া হয়েছে বাঁশ আর ত্রিপলের তৈরি অস্থায়ী যাত্র ছাউনি।
তবে শুক্রবার বিকেলে মহাখলী বাস টার্মিনালে গাবতলী ও কল্যাণপুরের মতো যাত্রীদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়নি। এর কারণ হিসেবে অনলাইনে অগ্রিম টিকিট বেশি বিক্রি হওয়ায় টার্মিনালে রানিং যাত্রীর চাপ কম বলে দাবি করেছেন বাস কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে এই টার্মিনালে দূরপাল্লার পরিবহনের ইদের আগ পর্যন্ত টিকিট শেষ হয়ে গেলেও স্বল্প দূরত্বের জেলাগামী বাসের টিকিট পর্যাপ্ত রয়েছে বলে দাবি করে কর্তৃপক্ষ।
রংপুরগামী যাত্রী তরিকুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে ইদের আনন্দ শুরু হয় সেইদিন, যেদিন আমি বাস বা ট্রেনের টিকিট বুক দিই। ওই দিন থেকে শুধু মনে হয় কবে বাড়ি যাব। এবার ট্রেনে টিকিট না পেয়ে বেশ কিছু দিন আগে আমি অনলাইনে বাসের টিকিট বুক দিয়েছিলাম। আর কিছুক্ষণ পরেই আমার বাস ছাড়বে।
সোলাইমান সেলিম নামে টাঙ্গাইলগামী যাত্রী বলেন, ইদে আমাদের টিকিট নিয়ে কখনোই ঝামেলা পোহাতে হয় না। অগ্রিম টিকিটও কাটতে হয় না। মহাখালী এলেই বাস পাওয়া যায়।
সোলাইমান সেলিমের মতো ময়মানসিং গামী শহিদুল ইসলাম বলেন, আমারা ময়মানসিংয়ের মনুষ ইদে টিকিট নিয়ে চিন্তা করি না। আমরা চিন্তা করি গাজীপুর পার হওয়া নিয়ে। ৮-১০ বছর ইদের সময় এই গাজীপুরেই আমাদের ঘন্টার পর ঘন্টা লেগে যেতো। তবে এখন রাস্তা অনেক ভালো হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে বাড়ি যাচ্ছি তাই অন্য রকম এক আনন্দ হচ্ছে।
মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রীর চাপ তুলনামূলক কম কেন জানতে চাইলে বগুড়া- নাঁওগাগামী একতা পরিবহনের কাউন্টারে থাকা বিল্পব হোসেন বলেন, এবার ইদে আমাদের প্রায় ৬০-৭০ ভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়ে গেছে। শুধু আমাদের একার না, এই টার্মিনালের প্রায় সব বাসের টিকিটই অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। তাই যাদের বাসের সময় হয় কেবল তারাই টার্মিনালে আসছে। তার যাত্রীর চাপ কম মনে হচ্ছে।
ঢাকা-রংপুরগামী এস আর ট্রাভেলসের কাউন্টার ম্যানেজার মোহাম্মাদ মুকুল বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে মূলত ইদের চাপ শুরু হয়েছে। তবে আমাদের বাসের টিকি অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। বেশির ভাগ টিকিটই অনলাইনে কেটেছে যাত্রীরা। এখন কেউ টিকি ক্যানসেল না করলে নতুন টিকিট দিতে পারব না।
যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় গাবতলী ও মহাখালী টার্মিনাল এলাকায় আইশৃংখলা বাহিনীর কন্ট্রোল রুম দেখা গেছে। এ ছাড়া টার্মিনালের কেন্দ্রীয় মাইকে যাত্রীদের বিভিন্ন সচেতনতামূলক ঘোষণাও দিতে দেখা গেছে।