দলীয় প্রতীকবিহীন স্থানীয় নির্বাচনে দ্বিধাবিভক্ত আ’লীগের তৃণমূল

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোযোগ নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। সামনে দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। পাশাপাশি চার ধাপে হবে দেশের বেশিরভাগ উপজেলার নির্বাচন। এরই মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বা প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের এ সিদ্ধান্তের ফলে সম্ভাব্য অনেক প্রার্থীর ওপর তৈরি হয়েছে বাড়তি চাপ। দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটারদের সন্তুষ্ট করেই জিতে আসতে হবে তাদের। যে কারণে এরই মধ্যে এলাকামুখী হয়েছেন প্রার্থীরা।

তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে প্রতীক দিয়ে যেমন বেকায়দায় পড়েছে আওয়ামী লীগ, হুট করে সেটি না দেওয়ার সিদ্ধান্তেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে তৃণমূলে। এর ফলে কেন্দ্র তোষণে ব্যস্ত নেতারা পড়েছেন বেশি বিপাকে। যদিও উজ্জীবিত কর্মীনির্ভর নেতারা। সব মিলিয়ে পরিবেশ বেশ সরগরম হলেও দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগের তৃণমূল। একই দলের একাধিক প্রার্থী হওয়ায় কোন্দল আরও বাড়ছে।

গত ২২ জানুয়ারি রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দলটির নেতারা বলছেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর করতে এবং দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত।

একদিক থেকে ভালো হয়েছে। প্রার্থীরা নিজেদের অবস্থান যাচাই করে আসতে পারবেন। আরেক দিক থেকে দেখা যায়, যারা রাজনীতিতে আপস করে, সব দলের সঙ্গে ভেতরে ভেতরে সমন্বয় করে চলে, তারা এগিয়ে যাবে। পেছনে পড়ে যাবে দলের পোড়খাওয়া প্রকৃত কর্মীরা।

এই সিদ্ধান্তের ফলে দলের শৃঙ্খলা ফিরবে নাকি বিশৃঙ্খলা বাড়বে, জানতে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজ। এ প্রশ্নে তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকে বলছেন, ‘এটিকে স্বাগত জানাই। এমন সিদ্ধান্ত দলের জন্য মঙ্গলজনক।’ আবার কেউ কেউ বলছেন, ‘এটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত। তবে সিটি করপোরেশনের মতো বড় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক প্রয়োজন।’ অনেকে আবার ভালো-খারাপ দুই দিকই তুলে ধরেছেন।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইসহাক খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটি একদিক থেকে ভালো হয়েছে। প্রার্থীরা নিজেদের অবস্থান যাচাই করে আসতে পারবেন। অনেকাংশেই সঠিক নেতৃত্ব আসবে। আবার আরেক দিক থেকে দেখা যায়, এই সুযোগ নেবে বিরোধীরা। যারা রাজনীতিতে আপস করে, সব দলের সঙ্গে ভেতরে ভেতরে সমন্বয় করে চলে, তারা এগিয়ে যাবে। পেছনে পড়ে যাবে দলের পোড়খাওয়া প্রকৃত কর্মীরা।’

এ নিয়ে কথা হয় ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামূল আলমের সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনে প্রতীক দেওয়ার দরকার ছিল। এটা বড় নির্বাচন। এরপরে যেগুলো যেমন- উপজেলা, জেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে প্রতীক দরকার নেই।’

ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটু বলেন, ‘আমাদের দলীয় সভাপতি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকবে না। অবশ্যই সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আমি মনে করি, উনার (শেখ হাসিনার) এ সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি সবসময় নেত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। গণতান্ত্রিক পক্রিয়ায় সবারই অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এর মাধ্যমে নাগরিকরা একজনকে বেছে নেবেন। নির্বাচন পক্রিয়ার এটিই মূল লক্ষ্য। আমি সেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আস্থা রেখে এবং প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলতে চাই- এই নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক হবে।’

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা কাজী আজাদ জাহান শামীমও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। জাগো নিউজকে শামীম বলেন, ‘প্রতীক ছাড়া নির্বাচনকে স্বাগত জানাই। বিগত সময়ের যে তিক্ত অভিজ্ঞতা- যিনি প্রতীক পান, উনার প্রতীক পাওয়ার যোগ্যতা আমাদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। এই জায়গা থেকে আমাদের দল প্রতীক ছাড়া নির্বাচনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে সব প্রার্থী মাঠে নিজের অবস্থান যাচাই করতে পারবে, কেন্দ্রও যাচাই করতে পারবে। ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচনে যখন প্রতীক (প্রার্থী) দেবে, তখন কেন্দ্র সুন্দর ভূমিকা রাখতে পারবে। প্রার্থী মনোনয়নে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’

বিগত সময়ের যে তিক্ত অভিজ্ঞতা- যিনি প্রতীক পান, উনার প্রতীক পাওয়ার যোগ্যতা আমাদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। এই জায়গা থেকে আমাদের দল প্রতীক ছাড়া নির্বাচনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে সব প্রার্থী মাঠে নিজের অবস্থান যাচাই করতে পারবে, কেন্দ্রও যাচাই করতে পারবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ না করার সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের নিজস্ব দলীয় সিদ্ধান্ত। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইনের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আওয়ামী লীগ এবার দলগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আসন্ন উপজেলাসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচন অধিক অংশগ্রহণমূলক, উৎসবমুখর করা এবং আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত। এতে দেশের আইনের সঙ্গে কোনো সংঘাত হবে না।’

২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার আইন সংশোধন করে দলগতভাবে প্রতীক দিয়ে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়। সে সময় এর বিরোধিতা করে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল। এমনকি আওয়ামী লীগের তৃণমূলও এর বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে গত ৮ বছর দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। ফলে দলীয় কোন্দল ও দলাদলি পৌঁছে গেছে গ্রাম পর্যায়ে। এমনকি কোন্দল ঢুকেছে পরিবারেও। খোদ আওয়ামী লীগের মধ্যে বেড়েছে দলগত বিভক্তি ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত