বাংলাদেশের বিখ্যাত টাঙ্গাইল শাড়ির ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই স্বত্ব) পশ্চিমবঙ্গের বলে দাবি করেছে ভারত। দেশটির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভিত্তিহীন এ দাবি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভারতের সরকারের মিনিস্ট্রি অব কালচারের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে এ ঘোষণাটি আসে। এরপর থেকেই সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্যের জিআই স্বত্ব ভারত পাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশিরা।
জিআই হলো ভৌগোলিক নির্দেশক সনদ, যা উৎপাদককে উৎপাদিত পণ্যের ওপর স্বতন্ত্র অধিকার দেয়। এতে অন্য দেশের সমজাতীয় পণ্য থেকে তাদের পণ্য আলাদাভাবে চেনা যায়। এর ফলে ওই পণ্যের আলাদা পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়। বিশ্ববাজারে উৎপাদনকারীরা জিআই পণ্যের জন্য ভালো দামও পেয়ে থাকেন। স্বত্ব পাওয়ার ঘটনায় পোশাক সংশ্লিষ্ট অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
টাঙ্গাইল শাড়ির একটি সুদীর্ঘ ঐতিহ্য ও ইতিহাস রয়েছে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো একটি কুটির শিল্প। ব্রিটিশ আমল থেকেই এই শাড়ি বুননের ইতিহাস। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এর ব্যাপক প্রসার হয়।
এছাড়া নাম থেকেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তি কোথায়। তবে, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কিছু তাঁতি বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে গিয়েছিলেন। তারাই সেখানে টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি শুরু করেন। কিন্তু শাড়ির নাম সেই টাঙ্গাইলই রয়ে গেছে।
কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে এখন একে ঢালাওভাবে পশ্চিমবঙ্গের বলে দাবি করা হয়েছে। বিখ্যাত টাঙ্গাইল শাড়ির উৎস বাংলাদেশ হলেও সম্প্রতি এর ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই স্বত্ব) বাগিয়ে নিয়েছে ভারতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে পোস্টটি প্রকাশ করার পর এতে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার তিনশ মন্তব্য পড়েছে। এর প্রায় সবই ভারতীয় দাবির প্রতিবাদ ও সমালোচনা করে।
বেশিরভাগ মন্তব্যে ভারতের সমালোচনা করে বলা হয়েছে, শাড়িটির নাম টাঙ্গাইল। আর সেই টাঙ্গাইলের অবস্থান বাংলাদেশে। এখানেই টাঙ্গাইল শাড়ির জন্মস্থান, পশ্চিমবঙ্গে নয়। এছাড়া আরও অনেকেই এই দাবিকে ‘অদ্ভূত ও হাস্যকর’ বলে অভিহিত করেছেন।
আবার অনেকেই বলেছেন, টাঙ্গাইল শাড়ি আমাদের ঐতিহ্য। এটাকে আপনাদের (ভারতের) নিজেদের নামে ব্যবহার করে অন্যায় করছেন। আশা করি আপনারা এই ভুল সিদ্ধান্ত থেকে অতি শিগগিরই সরে আসবেন।
এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নেটিজেনরা তো বটেই অনেক গবেষকও টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব পাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত ও যথাযথ পদক্ষেপ নেয়, সে দাবি জানিয়েছেন।