জিম্মি নাবিকদের সঙ্গে স্বজনের যোগাযোগ, আলোচনা চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজের সব নাবিক সুস্থ আছেন। দস্যুদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনও সমঝোতা হয়নি। তবে যোগাযোগ আছে। আশা করছি শিগগিরই আমরা সব নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবো।’

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ’র নাবিকরা শুক্রবার তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন। স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে বাংলাদেশে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দিয়েছে জলদস্যুরা।

নাবিকদের স্বজন ও জাহাজটির মালিক পক্ষ কেএসআরএম সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে জলদস্যুদের সঙ্গে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জাহাজের মালিক পক্ষের আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তবে জাহাজ মালিক কোনো ধরনের অভিযানের পক্ষপাতী নন।

নাবিকরা জানিয়েছেন, তারা সুস্থ ও ভালো আছেন। জলদস্যুরা তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি। তবে তাদের বিশুদ্ধ পানি ও খাবার ফুরিয়ে আসছে।

জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খানের সঙ্গে তার মা ও স্ত্রীর কথা হয়েছে। তার ছোট ভাই আসিফ খান বলেন, ‘ভাইয়া ভাবির মোবাইলে ফোন করে মা ও আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। জাহাজে থাকা জলদস্যুরা সব নাবিককে তাদের পরিবারের সদস্যদের ফোন করতে দিয়েছে বলে ভাইয়া আমাদের বলেছেন

‘ভাইয়ার অ্যালার্জির সমস্যা হলেও তিনি সুস্থ আছেন। অন্যরাও ভালো আছেন।’

আতিক উল্লাহ খান ফোনে স্বজনদের জানিয়েছেন, জাহাজে পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে। দিনে এক ঘণ্টা পানি ব্যবহার করতে দেয়া হচ্ছে তাদের। জাহাজটির অদূরে একটি বিদেশি যুদ্ধজাহাজ টহল দেয়ায় দস্যুরা দিনের বেশিরভাগ সময় নাবিকদের ব্রিজে নিয়ে রাখে।

জিম্মি অয়েলার মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের ভগ্নিপতি বদরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার শ্যালকের সঙ্গে সবশেষ বৃহস্পতিবার কথা হয়েছে। একইসঙ্গে কয়েক সেকেন্ডের একটা অডিও ভয়েস পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে সে মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করেছে। সে সুস্থ আছে বলে জানিয়েছে। জলদস্যুদের পক্ষ থেকে জাহাজ মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার বিষয়টি তারাও জানতে পেরেছে বলে জানিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জলদস্যুরা জাহাজে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছে। আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর জাহাজ কিংবা বিমান কাছে এলে দস্যুরা সব নাবিককে জাহাজের ব্রিজে (জাহাজ চালানোর কক্ষ) তুলে নিয়ে যায়। সেখানে নাবিকদের অস্ত্রের মুখে রাখা হয়।’

আবদুল্লাহর মালিক প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপের মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘নাবিকরা তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন। জলদস্যুরা সেই সুযোগ দিয়েছে।’

আলোচনা অব্যাহত:

জলদস্যুদের সঙ্গে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জাহাজের মালিক পক্ষের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। চলছে মুক্তিপণ নিয়ে দরকষাকষি। তবে কত টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে সে বিষয়ে মালিকদের পক্ষ থেকে কোনও তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘জাহাজের সব নাবিক সুস্থ আছেন। বৃহস্পতিবারও পরিবারের সঙ্গে জাহাজের একাধিক নাবিক যোগাযোগ করেছেন। নাবিকদের বিষয়ে জাহাজ মালিকের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে।’

এমভি আব্দুল্লাহকে ২৩ নাবিকসহ জিম্মি করার ৯ দিনের মাথায় বুধবার (২০ মার্চ) দুপুরে দস্যুরা অন্য মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করে জাহাজ মালিকের সঙ্গে।

জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজের সব নাবিক সুস্থ আছেন। দস্যুদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনও সমঝোতা হয়নি। তবে যোগাযোগ আছে। আমরা সব নাবিককে সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছি। আশা করছি শিগগিরই আমরা সব নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবো।’

তিনি বলেন, ‘তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ হলেও এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। দস্যুদের তরফ থেকে এখনও মুক্তিপণ দাবি করা হয়নি।’

প্রসঙ্গত, ১২ মার্চ সোমালিয়া উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল দূরে ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই করে জলদস্যুরা। বর্তমানে জাহাজটি সোমালিয়ার গদভজিরান উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে রাখা হয়েছে।

এদিকে জিম্মি করে রাখা জাহাজটির চার থেকে পাঁচ নটিক্যাল মাইল দূরে বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে। যুদ্ধজাহাজটি জিম্মি জাহাজকে নজরে রাখছে। অভিযান না চালালেও যুদ্ধজাহাজের নজরদারি নাবিকদের নিরাপদে ফেরাতে দস্যুদের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করছেন অভিজ্ঞ নাবিকেরা।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত