জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতে আবারও কোন্দল ও বিভক্তি তৈরি হয়েছে জাতীয় পার্টিতে। এবার কমিটি পরিবর্তনের আবেদন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দারস্থ হয়েছে রওশনপন্থিরা। নিজের গঠিত কমিটিকে আমলে নিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালকে চিঠি দিয়েছেন তারা।
কমিশন বলছে, দুই পক্ষ থেকে দুটি কমিটি হলে তখন বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে । আইনগত দিকগুলো তখন খতিয়ে দেখা হবে।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) কমিটি পরিবর্তনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে এ চিঠি দেন রওশন এরশাদের ঘোষিত কমিটির মহাসচিব কাজী মো. মামুনূর রশিদ। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২৮ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং একাদশ সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের গুলশানের বাসভবনে জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের এক জরুরি বর্ধিত সভা হয়। সভায় সর্বসম্মতিতে পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সভায় তুমুল হর্ষধ্বনি ও করতালির মধ্য দিয়ে উপস্থিত নেতাদের ঐকান্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতাবলে পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবং পার্টি চেয়ারম্যান তার ক্ষমতা বলে কাজী মো. মামুনূর রশিদকে অন্তর্বর্তীকালীন (পরবর্তী সম্মেলন না হওয়া অবধি) জাতীয় পার্টির মহাসচিব নিয়োগ করেছেন।
এতে বলা হয়, বর্তমানে নিবন্ধন নম্বর-১২ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ ও মহাসচিব কাজী মো. মামুনূর রশিদ জাতীয় পার্টির দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করা হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গত রবিবার ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমাদের কাছে যে কমিটি আছে, সেখানে চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদে যাকে রাখা হয়েছে, তাকেই আমরা আমলে নেব। অন্য কোনো কমিটি হলে তা কাউন্সিলের মাধ্যমে আসতে হবে। এক্ষেত্রে দুই পক্ষ থেকে দুটি কমিটি হলে তখন আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করব। আইনগত দিকগুলো তখন খতিয়ে দেখা হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় পার্টিতে বিভক্তি দেখা দেয়। জি এম কাদেরের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে গত সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন নিজে এবার নির্বাচনে অংশ নেননি। তার অনুসারীদের কাউকেই মনোনয়ন দেয়নি জাতীয় পার্টি।
নির্বাচনের পর অন্তঃকোন্দল আরও বড় আকার ধারণ করে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ কয়েকজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ অভিযোগ এনে ৬৭১ জন নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
এ প্রেক্ষাপটে গতকাল রবিবার দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে ‘বহিষ্কার’ করে নিজেই নিজেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করলেন রওশন এরশাদ।