জলদস্যুর কবলে কবির গ্রুপের জাহাজ, স্থান বদল, টাকার কথা এখনো বলেনি!

নিজস্ব প্রতিবেদক

নোঙর তুলে ফের এমভি আবদুল্লাহর স্থান পরিবর্তন করছে জলদস্যুরা। শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে আগের অবস্থান থেকে আরো ৪০ মাইল দূরে নোঙর করে ওরা।বৃহস্পতিবার দুপুরে জাহাজটি সোমালিয়ান কোস্ট থেকে ৭ মাইল দূরে নোঙর করা হয়েছিল। এদিকে স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে জিম্মি নাবিকদের পরিবারের সঙ্গে শুধুমাত্র দিনের বেলা যোগাযোগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টার দিকে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন মার্চেন্ট নেভির ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান।

তিনি বলেন, ‘সোমালিয়ার স্থানীয় সরকারের নির্দেশক্রমে এমভি আবদুল্লাহ আজ (শুক্রবার) সকাল ১১টায় নোঙর তুলে স্থান পরিবর্তন করেছে। বিকেল ৪টার দিকে আগের অবস্থান হতে ৪০ মাইল দূরে এসে নোঙর করার প্ল্যান করেছে।’

আতিক ইউএ খান বলেন, ‘পুরো জাহাজ এর সিকিউরিটি আপাতত ওদের হাতে। এজন্য জাহাজের বিভিন্ন অবস্থানে মেশিনগান আর একে-৪৭সহ নিরাপত্তা প্রহরী বসানো হয়েছে। আপাতত জলদস্যুদের সাথে কথা বলার একমাত্র মাধ্যম ওদের ইন্টারপ্রিটার। মোটামুটি ভাল ইংরেজি বলেন। অন্যদের সাথে শুধু ইশারা ইঙ্গিতের মাধ্যমে কুশল বিনিময় হয়।’

এদিকে আটকের পরপরই জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হলেও বর্তমানে নাবিকদের ব্রিজে থাকা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে পরিবারের সাথে কথা বলার অনুমতি দিয়েছে দস্যুরা।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) বিকেলে জাহাজে জিম্মি এক নাবিক সিভয়েস২৪-কে এ তথ্য জানিয়েছেন।

ওই নাবিক জানান, দস্যুরা তাদের সাথে এখন পর্যন্ত কোনো খারাপ আচরণ করেনি। শুধুমাত্র দিনের বেলায় জলদস্যুরা সব নাবিককে ব্রিজে থাকা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে পরিবারের সাথে কথা বলার অনুমতি দিয়েছে। তবে, সন্ধ্যার পর কারো সাথেই যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তারা এখন পর্যন্ত মুক্তিপণের কোনো পরিমাণ বলেনি।

ওই নাবিক আরও জানান, আজ হতে তাদের জাহাজের সাধারণ রুটিন মেনে চলার জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। ইঞ্জিনিয়াররা তাই ইঞ্জিন রুমে স্বাভাবিক কাজ করার অনুমতি পেয়েছে। ইঞ্জিনরুমে জলদস্যুরা কোনো পাহারা বসায়নি।

এর আগে, গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় বেলা একটার দিকে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। সশস্ত্র জলদস্যুরা মাত্র ১৫ মিনিটে ২৩ নাবিককে জিম্মি করে জাহাজটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। এর পর সোমালিয়া উপকূলের দিকে যাত্রা শুরু করে।বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে সোমালিয়ার গ্যারাকাড উপকূলে পৌঁছে জাহাজটি।

জাহাজে জিম্মি ২৩ নাবিকেরা হলেন—মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মো. শামসুদ্দিন, মো . আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর একই গ্রুপের এসআর শিপিং এর আরেকটি জাহাজও জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। সেই জাহাজের নাম জাহান মণি। ৪০ কোটি টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে ১০০ দিনের মাথায় ওই জাহাজ থেকে মুক্তি পান ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রী।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত