পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের আরও সম্পদ জব্দের আওতায় আসছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে নতুন করে তাদের আরও সম্পদের তথ্য সংগ্রহের পরে সেগুলোও জব্দের আওতায় আসবে। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এ তথ্য জানিয়ে বলেন, অনুসন্ধান মাত্র শুরু। আরও অনেক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে।
এদিকে, সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব জব্দের বিষয়ে বেনজীর আহমেদের ব্যাখ্যা রয়েছে। শিগগির তারা আদালতকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাবেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী শাহ মনজুরুল হক। একই সঙ্গে এ আদেশ স্থগিতের আবেদন করবেন বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ৮৩টি জমির দলিল ক্রোক ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করার আদেশ দেন ঢাকার আদালত। দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হাফিজুল ইসলামের পক্ষে দুদকের পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন। আদেশে বিচারক বলেন, ৮৩টি স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা না হলে তা হস্তান্তর হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে, যা পরবর্তীতে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না। তাই মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১৪ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন, বিধিমালা-২০০৭ এর বিধি ১৮ অনুযায়ী স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ জব্দের কথা বলেন। এছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এই মর্মে আরও আদেশ দেওয়া হয় যে, ওই হিসাবগুলোর (৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট) ওপর জব্দের আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় অর্থ জমা করা যাবে কিন্তু কোনো অবস্থাতেই উত্তোলন করা যাবে না।
এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, দুদকের অনুসন্ধানকারী দল মনে করেছে অনুসন্ধানের স্বার্থে এসব সম্পদ আপাতত জব্দ হওয়া উচিত। নয়তো পরবর্তীতে বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত জব্দের আদেশ দিয়েছেন। দুদকের অনুসন্ধানকারী দল যদি মনে করে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের আরও সম্পদ আছে, তাহলে সেগুলোও জব্দের জন্য পরবর্তীতে আবেদন করা হবে।
দুদকের এ আইনজীবী আরও বলেছেন, জব্দকৃত সম্পদে অন্য কারও মালিকানাধীন সম্পদ ভুলক্রমে চলে এসেছে কিনা-সেটি নিশ্চিত হতে সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রচারের কথা বলেছেন আদালত। এক্ষেত্রে ৩০ দিনের সময় দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এর ফলে বিজ্ঞপ্তি প্রচারের এক মাসের মধ্যে অন্য কারও সম্পদ থাকলে তিনি বা তারা সংশ্লিষ্ট আদালতে গিয়ে দাবি জানাতে পারবেন। অনুসন্ধানে যেটুকু অগ্রগতি হয়েছে, সেটি আদালতে দাখিল করা হবে। কেননা এখানে অনেক বিষয় যাচাই করতে হবে। এজন্য পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
দুদক তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে তলব করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, সেটি অনুসন্ধানকারী দলের ওপর নির্ভর করে। অনুসন্ধানের অংশ হিসাবে তারা কি করবেন সেটি তাদের বিষয়।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে বেনজীর আহমেদের আইনজীবী শাহ মনজুরুল হক আরও বলেন, আদালতের জব্দের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বেনজীর আহমেদের নিজেরও একটি ব্যাখ্যা থাকতে পারে। তিনি কিভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন, সেসব বিষয়ে অবশ্যই তার কথা থাকতে পারে। আমরা সেগুলো শিগগিরই আদালতকে জানাব। একইসঙ্গে নিু আদালতের আদেশ স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করবেন বলেও তিনি জানান।
বেনজীর আহমেদের দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলে তার বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগের তদন্ত করতে দুদকে আবেদন করেন সংসদ-সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। পরবর্তীতে তার সম্পদের তথ্য অনুসন্ধানে নামে সংস্থাটি। দুদকের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী ও জয়নাল আবেদীনের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়।