জনতা ব্যাংকের তামাই শাখার ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা কোথায় গেল

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

রোববার হিসাব করতে গিয়ে বিষয়টি ধরা পড়ে। রাতে তামাই শাখার ব্যাংক ম্যানেজারসহ আরও দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। তদন্ত টিম গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তামাই শাখার জনতা ব্যাংক পিএলসির ক্যাশ ভোল্ট থেকে ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা উধাও হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

রোববার হিসাব করতে গিয়ে বিষয়টি ধরা পড়ে। রাতে তামাই শাখার ব্যাংক ম্যানেজারসহ আরও দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। তদন্ত টিম গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আটক ব্যক্তিরা হলেন জনতা ব্যাংকের তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল আমিন (৪২), সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম (৩৪) ও ব্যাংক অফিসার রাশেদুল ইসলাম (৩১)।

জনতা ব্যাংকের সিরাজগঞ্জের এরিয়া অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. নজরুল ইসলাম তামাই শাখার ম্যানেজারসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, জনতা ব্যাংকের তামাই শাখার ক্যাশ লেনদেন নিয়ে সন্দেহ হলে রোববার এ শাখায় উপস্থিত হয়ে লেনদেনের সবকিছু অডিট শেষে অভিযোগকারী দেখতে পান ক্যাশ ভল্টে পাঁচ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার হিসাবে গড়মিল রয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, এ সময় তামাই জনতা ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক, সহকারী ব্যবস্থাপক ও অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

পরে তাদের বিরুদ্ধে বেলকুচি থানায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়। এর পর রাতে পুলিশ তাদের আটক করে জেল হাজতে পাঠায়। বিষয়টি টাকা লেনদেনের, সেই কারণে অভিযোগ দুদকে পাঠানো হয়েছে।

বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান জানান, লিখিত অভিযোগসহ তিন ব্যাংক কর্মকর্তাকে আমাদের হাতে হস্তান্তর করা হয়। যেহেতু এটি ব্যাংকিং অর্থনৈতিক বিষয় তাই বিষয়টি দুদুকে পাঠানো হয়েছে। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়।

সরজমিনে সোমবার সকালে তামাই শাখায় গিয়ে দেখা যায়, ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন করে এখানে দায়িত্ব নিয়েছেন কামরুল হাসান। এ সময় দেখা দেখা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দুই সদস্যের একটি তদন্ত টিম পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে তদন্ত টিম তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যে দুই তদন্ত কর্মকর্তা এসেছেন তারা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া অফিসের যুগ্ম পরিচালক এস এম সাজ্জাদ হোসেন ও সহকারী পরিচালক ওমর ফারুক।

জানা যায়, হিসাব অনুসরে তামাই শাখার ক্যাশ ভল্টে মোট ৭ কোটি ১১ লাখ ২৪০ টাকা থাকার কথা থাকলেও সেখানে বর্তমানে ১ কোটি ৭৭ লাখ ৬১ হাজার ২৪০ টাকা রয়েছে। বাকি ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিশাল অংকের হিসাব অনুসারে ক্যাশ ভল্টেই মজুদ থাকার কথা ছিল।

সোমবার সকালে অফিসে গিয়ে দেখা যায়, অফিসে সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। ক্যামেরাটি নতুন না সংস্কার করা হচ্ছে সে বিষয়ে ব্যাংকের কেউ মুখ খোলেনি।

তামাই জনতা ব্যাংক পিএলসির নতুন শাখা ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। বেশ কয়েকদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী অফিসের বিভিন্ন কর্তারা কাজ করছেন। তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নেবেন।

তদন্ত টিমের প্রধান বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া অফিসের যুগ্ম পরিচালক এস এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ঠিক কত টাকার ঝামেলা রয়েছে তা এখন বলা সম্ভব নয়। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। টাকা সরানো হয়েছে কি না বা হিসাবের কোথাও ভুল হয়েছে তা ক্ষতি দেখা হচ্ছে। বিষয়টি ঠিক কতদিন ধরে হয়ে আসছে সেটাও এখন দেখার বিষয়।

এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই ব্যাংকের গ্রাহকরা ব্যাংকে এসে ভিড় জমাচ্ছেন। তাদের টাকা ঠিক আছে কি না তা জানার চেষ্টা করছেন।

ব্যাংকে আসা রাজু নামের একজন জানান, ব্যাংকের টাকা চুরি হওয়ার খবর শুনে এসেছি। তিন ব্যাংক কর্মকর্তাকে পুলিশ আটক করেছে, ব্যাংক খোলা আছে কি না তাই দেখতে এসেছি।

গ্রাহক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ব্যাংক হলো টাকা রাখা নিরাপদ স্থান, অথচ এখান থেকেই টাকা লোপাট হচ্ছে। আমরা কাকে বিশ্বাস করি।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত