গ্যাসসংকটের পাশাপাশি এবার শুরু হয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুৎসংকটের কারণে কলকারখানা থেকে শুরু করে বাসাবাড়িতে সৃষ্টি হয়েছে চরম দুর্দশা।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনালে কারিগরি ত্রুটির কারণে এলএনজি সরবরাহে বিঘ্ন হওয়ায় গ্যাস সরবরাহ কমেছে। ফলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কিছুটা কম হচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অতিদ্রুত সমাধানে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। এই পরিস্থিতিতে দেশের কিছু কিছু এলাকায় খুবই স্বল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎবিভ্রাট হতে পারে। সম্মানিত গ্রাহকদের অনাকাক্সিক্ষত অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’
মন্ত্রণালয়ের ওই ঘোষণার আগেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্যমতে, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ৯ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার ৫৫ মেগাওয়াট। ঘাটতি ছিল ৩০০ মেগাওয়াট। পরদিন বুধবার দুপুরে প্রায় ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল। গতকাল এই ঘাটতি গিয়ে প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াটে গিয়ে দাঁড়ায়।
শীতে ঠা-া আবহাওয়ার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক কমে যায়। বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে সর্বোচ্চ ১০ হাজার মেগাওয়াট। গ্রীষ্মে এ চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এমনিতেই গ্যাসসংকটের কারণে আড়াই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। নতুন করে এলএনজি টার্মিনালে ত্রুটির কারণে উৎপাদনের পরিমাণ আরও কমে যায়। এর আগে চার হাজার মেগাওয়াট থেকে সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছিল গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে। তবে সংকটের কারণে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রের উৎপাদন সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াটে নেমে যাচ্ছে।
গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে কলকারখানায়ও সংকটের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাস নিতে আসা যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যাচ্ছে। বাসাবাড়িতে রান্নার কাজ ব্যাহত হচ্ছে চরমভাবে।
গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালে কারিগরি ত্রুটির কারণে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। শুক্রবার দিনভর চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সেখানকার মানুষ। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য এলাকাতেও বেড়ে যায় গ্যাসসংকট।
৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার এলএনজি টার্মিনালের ত্রুটি মেরামত শেষে শুক্রবার রাত ১০টায় ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। আস্তে আস্তে গ্যাস সরবরাহ বাড়তে থাকে।
জানতে চাইলে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (এলএনজি) মো. শাহ আলম গতকাল সন্ধ্যায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শনিবার দুপুর পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট ছাড়িয়ে গেছে। ক্রমেই সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।’
চট্টগ্রামে গ্যাস বিতরণ কোম্পানি কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সূত্রমতে, চট্টগ্রামের ছয় লাখ গ্রাহকের জন্য দৈনিক প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন থাকলেও ২৯০ থেকে ২৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এতে নগরীতে প্রায়ই গ্যাসসংকট দেখা দেয়।
প্রতিষ্ঠানটির অপারেশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আমিনুর রহমান বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রথমে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট দিয়ে গ্যাস সরবরাহ শুরুর পর শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেয়েছি। রবিবার (আজ) সকাল ৬টার মধ্যে আশা করছি অবশিষ্ট গ্যাস পেয়ে যাব।’
এদিকে গতকাল দিনভর চট্টগ্রামের অবস্থা শুক্রবারের মতো বেহাল ছিল না। ধীরে ধীরে গ্যাসের চাপ বাড়ায় অনেকের বাসায় চুলা জ¦লেছে। তবে সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাসের চাপ কম থাকায় বেশি সময় নিয়ে গ্যাস দিতে হয়েছে গাড়িগুলোতে। এতে সময়ও বেশি লেগেছে।