গুনাহ মাফের ১০ আমল

🖊️ মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ

মুমিনের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ঈমান আনা। অতঃপর মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর আনুগত্য করা। কোরআন ও হাদিসে এমন বহু আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে বান্দার গুনাহ মাফ হয়ে যায়। এখানে এমন কিছু আমল তুলে ধরা হলো—

১. বেশি বেশি সিজদা করা:

মাদান ইবনু আবু ত্বালহা আল-ইয়ামাবি (রহ.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আজাদকৃত গোলাম সাওবানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম।

আমি বললাম, আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলে দিন, যা করলে আল্লাহ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অথবা আমি তাঁকে প্রিয় ও পছন্দনীয় কাজের কথা জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু তিনি চুপ থাকলেন। আমি পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি তখনো চুপ থাকলেন।

তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছেন, তুমি আল্লাহর জন্য অবশ্যই বেশি বেশি সিজদা করবে। কেননা তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে, মহান আল্লাহ এর বিনিময়ে তোমার মর্যাদা এক ধাপ বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’- (তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৮)।

২. জুমার দিন মনোযোগসহ খুতবা শোনা:

এক জুমা থেকে অন্য জুমার মধ্যবর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।

সালমান ফারসি (রহ.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালোরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল থেকে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দুজন লোকের মধ্যে ফাঁকা করে না, অতঃপর তার নির্ধারিত সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে, তাহলে তার সে জুমা থেকে অন্য জুমার মধ্যবর্তী সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।- (বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)।

৩. হজ ও ওমরাহ পালন করা:

হজ ও ওমরাহ পালনে অনবরত গুনাহ মাফ হয়। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা হজ ও ওমরাহ পর পর একত্রে আদায় করো। কেননা এই হজ ও ওমরাহ দারিদ্র্য ও গুনাহ দূর করে দেয়, লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা যেভাবে হাপরের আগুনে দূর হয়। একটি কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।- (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ২৮৮৭)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে হজ করল, যার মধ্যে সে অশ্লীল কথা বলেনি এবং অশ্লীল কাজ করেনি, সে হজ থেকে ফিরে আসবে সেদিনের মতো (নিষ্পাপ অবস্থায়), যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল।- (বুখারি, হাদিস : ১৫২১)।

৪. মুসাফাহা করা:

মুসাফাহা করার দ্বারা গুনাহ মাফ হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে দুজন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে মুসাফাহা করে তাদের আলাদা হওয়ার আগেই তাদের (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।- (আবু দাউদ, হাদিস : ৫২১২)।

৫. সৃষ্টিজগতের প্রতি সদয় হওয়া:

সৃষ্টিজগতের প্রতি সদয় আচরণ করার দ্বারাও গুনাহ মাফ হয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, একজন লোক রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে তার ভীষণ পিপাসা লাগল। সে কূপে নেমে পানি পান করল। এরপর সে বের হয়ে দেখতে পেল যে একটা কুকুর হাঁপাচ্ছে এবং পিপাসায় কাতর হয়ে মাটি চাটছে। সে ভাবল, কুকুরটারও তার মতো পিপাসা লেগেছে। সে কূপের মধ্যে নামল এবং নিজের মোজা ভরে পানি নিয়ে মুখ দিয়ে সেটি ধরে উপরে উঠে এসে কুকুরটিকে পানি পান করাল। আল্লাহ তাআলা তার আমল কবুল করেন এবং তার গুনাহ মাফ করে দেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রত্যেক প্রাণীর উপকার করাতেই নেকি আছে।- (বুখারি, হাদিস : ২৩৬৩)।

৬. অজু করে মসজিদে যাওয়া:

উত্তমরূপে অজু করার দ্বারা অতীতের পাপরাশি মাফ হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি কি তোমাদের এমন কাজের কথা জানাব না, যা করলে আল্লাহ বান্দার গুনাহ ক্ষমা করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আপনি বলুন। তিনি বলেন, কষ্টকর অবস্থায়ও পরিপূর্ণভাবে অজু করা, সালাতের জন্য বেশি পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক সালাতের পর আরেক সালাতের জন্য অপেক্ষায় থাকা। আর এ কাজগুলোই হলো প্রস্তুতি (রিবাত)।- (মুসলিম, হাদিস : ৪৭৫)।

৭. জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়া:

জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার দ্বারা গুনাহ মাফ হয়। উসমান (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে ফরজ সালাতের জন্য পায়ে হেঁটে মসজিদে এসে ইমামের সঙ্গে সালাত আদায় করে তার গুনাহগুলো ক্ষমা করা হয়।- (ইবনু খুজায়মাহ, হাদিস : ১৪৮৯; সহিহ আত-তারগিব, হাদিস : ৩০০)।

৮. ভালো কাজ করা:

মন্দ কাজ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ভালো কাজ করার দ্বারা গুনাহ মাফ হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে সৎ কাজ মুছে ফেলে মন্দ কাজ।’- (সূরা হুদ, আয়াত : ১১৪)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) আবু জার (রা.)-কে বলেন, তুমি যেখানেই থাকো আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো। আর মন্দ কাজের পরপরই ভালো কাজ করো, তাতে মন্দ দূরীভূত হয়ে যাবে এবং মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো।- (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৭)।

৯. তাওবা করা:

তাওবা করার দ্বারা অতীতের পাপরাশি ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা নয়, যারা তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ তাদের গুনাহগুলো পরিবর্তন করে দেবেন নেকি দিয়ে। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’- (সূরা : ফুরকান, আয়াত : ৭০)।

১০. দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধারণ:

মুসলিম ব্যক্তি বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করলে এর প্রতিদানে তার গুনাহ মাফ হয় এবং পূণ্য লাভ করে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলিম ক্লান্তি, রোগ-ব্যাধি, দুশ্চিন্তা, দুঃখ-কষ্ট পেলে এমনকি তার শরীরে কাঁটাবিদ্ধ হলে আল্লাহ এর মাধ্যমে তার সব গুনাহ ক্ষমা করেন।’- (বুখারি, হাদিস : ৫৬৪২)।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত