যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক দিন ধরেই পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার নর্থইস্টার্ন, আরিজোনা স্টেট ও ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটিতে অভিযান চালানো হয়।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আগ্রাসনের প্রতিবাদে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোম্পানি ও ব্যক্তিদের বয়কটের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই মানবিকতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে ইসরায়েলের বিরোধিতা করছে।
ওদিকে বিক্ষোভ দমনে পুলিশ শক্ত অবস্থান নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শনিবার দুশ’ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। ভিয়েতনাম যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে হওয়া ছাত্র আন্দোলনের পর এবারই প্রথম দেশটিতে কোনো বিক্ষোভ দমনে এভাবে গণ হারে শিক্ষার্থীদের আটক করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক দিন ধরেই পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার নর্থইস্টার্ন, আরিজোনা স্টেট ও ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটিতে অভিযান চালানো হয়।
বোস্টন পুলিশ নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে ১০২ জনকে আটক করে। পুলিশ ওই শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের পর তাদের তাঁবু ছিনিয়ে নেয়।
নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছে, ‘বিক্ষোভে প্রফেশনাল সংগঠকদের ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়, যাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই। সেখানে ইহুদি বিদ্বেষী গালি শোনা গেছে এবং আমরা ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘৃণা সহ্য করতে পারি না।’
বিক্ষোভকারী নেতারা অবশ্য বহিরাগত আগমনের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
একই দিন আরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ৬৯ ও ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি থেকে ২৩ জনকে আটক করে পুলিশ।
ম্যাসাচুসেটস স্টেট পুলিশ শনিবার এক বিবৃতিতে জানায়, বোস্টনের নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ক্যাম্পাসের মাঠ থেকে তাঁবু সরাতে অস্বীকার করার পর ‘অনুপ্রবেশের’ অভিযোগে শতাধিক বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়। এরপর বিক্ষোভকারীদের স্থাপন করা ক্যাম্প সরিয়ে ক্যাম্পাস পরিষ্কার করার কাজে হাত দেয় পুলিশ।
গ্রিন পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জিল স্টেইনকে শনিবার আটক করা হয়েছে।
এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে তার এক মুখপাত্র জানান, মিসৌরির সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে গ্রেপ্তার হওয়া প্রায় ৮০ জনের মধ্যে জিল স্টেইন রয়েছেন। তবে তাকে কোনো অভিযোগের মুখোমুখি হতে হবে না বলে তারা প্রত্যাশা করছেন।
কলাম্বিয়া ও জর্জিয়ার এমরি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য ক্যাম্পাসগুলো শনিবার শান্ত ছিল বলে জানা গেছে।
ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট পলিটেকনিক সম্প্রতি সরাসরি পাঠদান ও গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান স্থগিত করে অনলাইন ব্যবস্থায় পাঠদানের ঘোষণা করেছে।
ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ক্যালিফোর্নিয়া ক্যাম্পাসে অ্যালামনাই পার্কে পুলিশের মাধ্যমে বিক্ষোভ দমনের কয়েকদিন পর শনিবার বিক্ষোভকারীরা আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। তবে এ সময় তাদের অংশগ্রহণে আয়োজিত বিক্ষোভ কর্মসূচি বেশিরভাগ সময় শান্তিপূর্ণ ছিল বলে জানা গেছে।
শনিবারের বিক্ষোভের পর অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসের সম্পত্তি ভাংচুরের অভিযোগ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘যারা আমাদের ক্যাম্পাসে বেআইনিভাবে ক্যাম্প করে চলেছে তাদের একটি অংশের হাতে একটি মূর্তি এবং ফোয়ারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাস সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।’
১৭ এপ্রিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে এই বিক্ষোভ শুরু হয় এবং দাঙ্গা পুলিশ সেখান থেকে শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করলে বিক্ষোভ পুরো যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।
ইহুদি শিক্ষার্থীরা অবশ্য কিছু বিক্ষোভকারীর কাছ থেকে বরাবরের মতো কথিত ইহুদি-বিদ্বেষের অভিযোগ করেছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন ইসরায়েল ও অন্যান্য প্রতিরক্ষা কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেয়।
ইসরায়েলি লবি গ্রুপগুলো ও খোদ বাইডেন প্রশাসনের অনেকেই এই ছাত্র আন্দোলনকে ইহুদিবিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করছেন। তাৎপর্যের বিষয় হলো, কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির দুটি ইহুদি সংগঠনই এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুরু হওয়া এই ছাত্র আন্দোলন বিশ্বের অন্য অনেক দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়াতেও ফিলিস্তিনের পক্ষে শনিবার রাস্তায় নেমে আসে মানুষ।