গেল দুদিন থেমে থেমে বৃষ্টির দেখা পাওয়া গেলেও সোমবার (৬ মে) বিকেলে চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যায় কালবৈশাখীর ঝড়। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক চলা এই ঝড়ে ৯৭ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতের তাণ্ডবের শঙ্কা রয়েছে চলতি সপ্তাহজুড়ে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া পূর্বাভাস কর্মকর্তা মেঘনাদ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বৈশাখ মাসে এমন পরিবেশ প্রকৃতির স্বাভাবিক চরিত্র। চট্টগ্রামে যখন কালবৈশাখী বইছিল তখন বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক স্থায়ী ছিল এই কালাবৈশাখী ঝড়। বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ৯৭ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বমোট ১২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’
ভারি বৃষ্টি ঝড়ো হাওয়া : জলজট, জনদুর্ভোগ
তিনি আরও বলেন, ‘আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে সাময়িক মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সেইসাথে কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এবং কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। আগামীকালও এমন আবহাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে।’
এদিকে দুঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরের ইপিজেড, সল্টগোলা, বন্দর, নিমতলা, বারিক বিল্ডিং আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, জিইসি, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, নতুন ব্রিজ, চকবাজার, পাঁচলাইশ এলাকার বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে পথচারী ও কর্মজীবী মানুষকে।
বৃষ্টি থেকে বাঁচতে জিইসি মোড়ে দোকানের নিচে আশ্রয় নেওয়া বেসরকারি চাকরিজীবী মো. সাদেক বলেন, ‘যে বৃষ্টি আর বাতাস। এই দোকানে এসে আশ্রয় নিলেও শরীরের ৮০ শতাংশই ভিজে গেছে। আধঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। বাসায় যেতে পারছি না। সকালে রোদ থাকায় ছাতাও আনিনি। এখন দেখছি পানিও উঠছে’।
প্রবল বৃষ্টি আর বাতাসে রিকশা চালানো কষ্ট। তাই সড়কের উপর রিকশা ছেড়ে পাশের একটি টংয়ের দোকানে মাথা গুঁজেন রিকশাচালক মোহাম্মদ আজহার। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একেতো ভারী বৃষ্টি অন্যদিকে অনেক জোরে বাতাস হচ্ছে। শুধু বৃষ্টি হলে কোনো রকম গাড়ি চালানো যেত। তবে বাতাসের কারণে কোনো রকমে রিকশা চালানো সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে যাত্রী নামিয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি।’
একই দোকানে দুর্ভোগে পড়া শফিউল আলম নামে আরেক পথচারী বলেন, যখন বের হয়েছিলাম তখন বৃষ্টি ছিল না। গাড়ি থেকে নামতেই দেখি ভারী বৃষ্টি। জোরেশোরে বাতাস। টানা দেড় ঘণ্টা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। কোনোভাবে নড়তে পারছি না। বৃষ্টি আর বাতাস না থামা পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব না।
এছাড়া ঝড়ে নগরের অনেক স্থানে গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহেও ব্যাঘাত ঘটেছে। এরমধ্যে নগরের জিইসি মোড়ের জাকির হোসেন রোডে বৈদ্যুতিক খুঁটি, ট্রান্সফরমার ও গাছপালা ভেঙে পড়েছে। এতে এমইএস কলেজ মোড় থেকে জিইসি মোড়ের যানচলাচলে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। তবে এই ঝড়ে আর কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কলকাতা থেকে ছেড়া আসা ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট চট্টগ্রাম শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের বদলে কক্সবাজারে জরুরি অবতরণ করে। সোমবার বিকেল ৫ টায় ৪৫ জন যাত্রী নিয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরে ফ্লাইটটি অবতরণ করে। আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের চট্টগ্রাম ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানা গেছে।