- জেরুজালেমে বর্তমানে এমন কোন ফিলিস্তিনি পুরুষ নেই যারা ইসরায়েলি হামলার শিকার হননি
- শুধুমাত্র বাসিন্দা-পথচারীই নয়, সেখানে কর্মরত সাংবাদিকদেরও টার্গেট করে থাকে ইসরায়েলি বাহিনী
বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলির মধ্যে একটি জেরুজালেম। ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলমান, তিন ধর্মের মানুষের কাছেই পবিত্র এই শহরটি ৫৭ বছর ধরে দখল করে আছে ইসরায়েল।
তবে গত বছরের সাত অক্টোবরের হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধের পর থেকে জেরুজালেমে থাকা ফিলিস্তিনিদের জীবন আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে।
হামাসের হামলার পরপরই, কঠোর নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয় জেরুজালেমের পুরাতন শহর এবং এর আশেপাশের এলাকা। মোতায়েন করা হয় হাজার হাজার ইসরায়েলি বাহিনী। পাশাপাশি চলাচলের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়।
মূলত সাত অক্টোবরের পর থেকেই ঘোর অমানিশা নেমে এসেছে জেরুজালেমে বসবাস করা ফিলিস্তিনিদের ওপর। তরুণ ফিলিস্তিনি পুরুষরা জেরুজালেমে ইসরায়েলি সৈন্যদের দ্বারা সহিংসতা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
জেরুজালেমে বর্তমানে এমন কোন ফিলিস্তিনি পুরুষ নেই যারা ইসরায়েলি হামলার শিকার হননি। খবর আল জাজিরা।
অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের থেকে ১৫ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত ইসাবিয়ায় বসবাস করেন দুই বন্ধু সামের (২২) এবং ওমর (২৮)। অন্যান্য সময়ের মতই এক শুক্রবার অন্যতম পবিত্রতম স্থান আল আকসায় জুমার নামাজ পরতে গিয়েছিলেন তারা।
কিন্তু ওল্ড সিটির প্রধান প্রবেশদ্বার দামেস্ক গেটে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর বাধার মুখে পরেন তারা। আল আকসায় প্রবেশে বাধা দিয়ে তাদের এলাকায় ফিরে যেতে বলা হয় এবং সেখানেই প্রার্থনা করার নির্দেশ দেওয়া হয় তাদের।
দুই বন্ধু ইসরায়েলি বাহিনীর বিরোধিতা না করে ফিরে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি কর্মকর্তা পুনরায় তাদের কাছে আসে এবং কোন ব্যাখ্যা না দিয়েই তাদের ওপর নির্যাতন চালাতে শুরু করে।
সামের ঘটনার পর আল জাজিরাকে বলেন, “তারা আমাদের ধাক্কা দিতে শুরু করে এবং তারপর লাঠি দিয়ে আমার বন্ধুকে মারধর করতে থাকে। আমরা বলার চেষ্টা করেছি আমাদের স্পর্শ করবেন না’।
ওমর জানান ইসরায়েলি বাহিনীর সদস্যরা তাদের দুজনকে প্রায় ৫০০ মিটার পর্যন্ত তাড়া করে এবং লাঠি দিয়ে পিটিয়েছিল।
আল জাজিরার সংবাদদাতা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি ইসরায়েলি কর্মকর্তাকে বলতে শুনেছেন যে, “তাদের পা ভেঙে ফেলুন যাতে তারা ফিরে না আসে।”
২৮ বছর বয়সী ওমর তার বন্ধু সামের চেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছিলেন। ওমরের পায়ে অনেক আঘাত লেগেছিল এবং তিনি ব্যথায় হাঁটতে পারছিলেন না।
এ সময় ওমর বলেন, “জেরুজালেমে একজন পুরুষ হওয়া কোন জীবন নয়, এখানে একজন ফিলিস্তিনি পুরুষ হিসেবে বেঁচে থাকা তাদের (ইসরায়েল) বিরক্ত করে।”
জেরুজালেমের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ইসরায়েলি বাহিনীর সহিংসতা প্রকাশ করতে গিয়ে আবু মোহাম্মদ বলেন, “যখন কোনো ফিলিস্তিনি পুরুষ ওল্ড সিটিতে প্রবেশ করতে চায়, তাদের তল্লাশি করা হয়। তল্লাশির সময় সৈন্যরা তাদের কনুই বা হাঁটু দিয়ে আঘাত করে থাকে।‘
তিনি আরও বলেন, ‘যদি আপনি কিছু বলেন, তাহলে তারা আরও নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, এমনকি আপনার হাসপাতালে যাওয়া লাগতে পারে।‘
তিনি উল্লেখ করেন যে ইসরায়েলি পুলিশ কর্মকর্তারা বয়স্ক এবং কম বয়সী পুরুষদের মধ্যে পার্থক্য করে না। এখানে এমন কোনো ফিলিস্তিনি পুরুষ নেই যাকে মারধর করা হয়নি।
আল জাজিরা জানায়, জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণ শুধুমাত্র বাসিন্দা এবং পথচারীদের লক্ষ্য করেই নয়। সেখানে কর্মরত সাংবাদিকদেরও টার্গেট করে থাকে ইসরায়েলি বাহিনী।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর জেরুজালেমের বাসিন্দা এবং তুর্কি আনাদোলু এজেন্সির একজন ফটো সাংবাদিক মুস্তাফা খারউফ (৩৬) ইসরায়েলি আধাসামরিক কর্মকর্তাদের হাতে গুরুতরভাবে মারধোরের শিকার হয়েছিলেন।
১৯৬৭ সালে সিরিয়া, মিশর ও জর্ডানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষে পূর্ব জেরুজালেম দখল করে ইসরায়েল। এর আগে ১৯৪৮ সালের যুদ্ধের তারা জেরুজালেমের পশ্চিমে অর্ধেক দখল করে নেয়। ১৯৮০ সালে ‘জেরুজালেম আইন’ পাস করে ইসরায়েল। এর মাধ্যমে তারা পবিত্র শহরটিকে ‘ইসরায়েলের রাজধানী’ হিসেবে ঘোষণা করে।