এলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর

নিজস্ব প্রতিবেদক

শুরু হলো বাঙালি জাতির গৌরবময় মাস, বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই  মাসে চূড়ান্ত বিজয়ের দেখা পায় বাঙালি জাতি। রচিত হয় গৌরবের অধ্যায়।

১৯৭১ সালে পুরো ডিসেম্বার জুড়ে ঘটে বেশ কিছু ঘটনা যার ফলে মুক্তিযুদ্ধে জয় লাভের গতি ত্বরান্বিত হয়। বাঙালির ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম পূর্ণতা পেতে শুরু করে ডিসেম্বরের শুরু থেকে।মাসের প্রথম দিন থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পিছিয়ে আসতে থাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধারাও এগোতে থাকেন রাজধানী ঢাকার দিকে। একে একে বিভিন্ন রণাঙ্গনে উড়তে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।

এই জাতি হাজার বছরের শৃঙ্খল থেকে মুক্তির লক্ষ্যে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে আসে। আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গড়ে উঠা আন্দোলনই একপর্যায়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়।

পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ আর বঞ্চনার বেড়াজাল ছিন্ন করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তার ডাকে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র জনযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর জাতির চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বর্বরোচিতভাবে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরপরই ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দেন। তার ডাকে পাকিস্তানের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বাংলার সর্বস্তরের মানুষ। হাতে তুলে নেয় অস্ত্র, শুরু হয় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে চলে বাঙালির মরণপণ যুদ্ধ। বীরত্বপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধের একপর্যায়ে বাঙালি বিজয়ের দিকে ধাবিত হতে থাকে।

তরতাজা প্রাণ বিসর্জন আর মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এই অর্জনের বেদনাবিধূর এক শোকগাথার মাসও এই ডিসেম্বর। এ মাসেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের সহযোগিতায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান- বুদ্ধিজীবী হত্যার নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। সমগ্র জাতিকে মেধাহীন করে দেয়ার এমন ঘৃণ্য কাজের নজির বিশ্বে আর নেই।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ আর ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর জল, স্থল আর আকাশপথে সাঁড়াশি আক্রমণে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদাররা। চারদিক থেকে ভেসে আসতে থাকে তাদের পরাজয়ের বার্তা।

যৌথবাহিনীর একের পর এক আক্রমণের মুখে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে দখলদাররা। একাত্তরের ৭ই মার্চ এই ময়দানেই স্বাধীনতার ডাক দিয়ে স্বাধীন বাংলার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ সেই স্থানেই পরাজয়ের দলিলে সই করেন পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজী। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম এ দিন পূর্ণতা পায় বিজয়ের মাধ্যমে। শেষ হয় হাজার বছরের বঞ্চনার ইতিহাস।

মহান এই বিজয়ের মাস উদযাপনে জাতীয় কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত