উত্তর আমেরিকার ফসল ‘কিনোয়া’ এবারই প্রথম চাষ হয়েছে চট্টগ্রামে। মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ২৪ শতক জমিতে প্রথমবারের মতো ‘সম্ভাবনার’ এ ফসল চাষ করেছেন কৃষক দীলিপ নাথ। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ঘরে উঠবে তাঁর স্বপ্নের ফসল। অন্যান্য ফসলের তুলনায় স্বল্প সময়, খরচ আর পরিশ্রমে ফসল উঠায় আবারো চাষের লক্ষ্যে এগুচ্ছেন তিনি। তাঁর দেখাদেখি আরো অনেক কৃষক আগ্রহী হয়েছেন শস্যদানা কিনোয়া চাষে।
মঘাদিয়া ইউনিয়নের তিনঘড়িয়াটোলা এলাকার কৃষক দীলিপ নাথ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায়ের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রথম জানতে পারেন বিদেশি এই ফসল সম্পর্কে। শুনে মনে কিছুটা সংশয় কাজ করলেও শেষমেশ নেমে পড়েন ফসল ফলাতে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সহযোগিতায় বীজ সংগ্রহ করা হয় বাংলাদেশে কিনোয়ার নতুন বীজ উদ্ভাবক শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক পরিমল কান্তি বিশ্বাসের কাছ থেকে। ১৭ ডিসেম্বর তিনি বীজ আবাদ করেন। ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে চারা গজিয়ে এখন ফসল ঘরে উঠার অপেক্ষায়।
কৃষক দিলীপ নাথ বলেন, ‘কিনোয়া সম্পর্কে জানতাম না। তাই ফলনের ব্যাপারে শুরুতে কিছুটা ভয় কাজ করেছে। তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কিনোয়া নিয়ে যে সম্ভাবনার পথ দেখিয়েছেন তাতে আমি পুরোপুরি আশ্বস্ত হয়ে ২৪ শতক জমিতে কিনোয়া চাষ করি। এখন পুরো ক্ষেতে ফসলে ভরপুর। আনন্দ লাগছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলতে পারবো। আশা করছি ভালো দাম পাবো।’
‘২৪ শতকে ১৪ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। দুই থেকে তিন মণ ফসল উঠার সম্ভাবনা’— বলেন কৃষক দীলিপ নাথ।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চট্টগ্রামে এই প্রথম হলেও দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে কিনোয়ার চাষ শুরু হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো ২৪ শতক জমিতে চাষ করা হয়েছে। বাংলাদেশে এখনো পরিচিতি না পেলেও এই সফলের বেশ চাহিদা রয়েছে ইউরোপ আমেরিকায়। বাংলাদেশের সুপারশপগুলোতেও বাজার গড়ে উঠছে বিদেশি এই ফসলের। কেজি প্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সুপারফুড নামে পরিচিত পাওয়া কিনোয়ায় রয়েছে হাইপ্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন ও এন্টিঅক্সিডেন্ট। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। তাই বৈশ্বিক বাজারে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘কিনোয়া উত্তর আমেরিকার ফসল। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পরিমল কান্তি বিশ্বাস স্যার বাংলাদেশে সর্ব প্রথম কিনোয়া নিয়ে কাজ করছেন। স্যারের কাছ থেকে বীজগুলো সংগ্রহ করেছি। পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো চাষ করে আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া গেছে। ধীরে ধীরে চাষের পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘অপরিচিত ফসল হওয়ায় এখনো স্থানীয় বাজার গড়ে উঠেনি। তবে ডা. জাহাঙ্গীর কবিরসহ বেশ কয়েকটি সুপারশপ বিদেশ থেকে আমদানি করে বিক্রি করছে। দিলীপ নাথের ফসল অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছেন ঢাকার বেশ কয়েকজন। হারবেস্ট/হারভেস্ট করলেই তা ক্রেতার কাছে পৌঁছে যাবে।’