ইরানের হামলার পর আতঙ্কের জনপদ পাকিস্তানের গ্রাম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের পাঞ্জগুর জেলার নিরিবিলি গ্রাম কোহ-ই-সবজে গত মঙ্গলবার সূর্যাস্ত দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছিল।

গ্রামটির বাসিন্দারা সন্ধ্যায় শান্ত পরিবেশের সঙ্গে অভ্যস্ত। কিন্তু হঠাৎ আকাশ থেকে কিছু বস্তু আসতে দেখে তাঁরা হতবাক হয়ে পড়েন। এরপর কানে তালা লাগিয়ে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ভয়ংকর দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। বিস্ফোরণের পর সেখানকার একটি বাড়ি ও পার্শ্ববর্তী মসজিদে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে।

পরবর্তী সময়ে জানা যায়, করিম দাদ ওরফে ইদ্রিসের আংশিক মাটির ঘরটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছিল।

ওই হামলায় করিম দাদের দুই সন্তান নিহত হয়। তারা হলো ৬ বছর বয়সী ছেলে হুমাইয়রা ও ১১ মাস বয়সী ছেলে সুলেইমান। ওই ঘটনায় করিমের স্ত্রী ও তিন মেয়ে আহত হয়েছেন।

ইরানের দাবি, জঙ্গিগোষ্ঠী জয়েশ আল-আদলের দুটি ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। ওই হামলার নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তান এটিকে সার্বভৌমত্বের ‘লঙ্ঘন’ বলেছে। পাশাপাশি গতকাল বুধবার ইরানে নিযুক্ত তাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করেছে। সেই সঙ্গে ইসলামাবাদে নিয়োজিত ইরানের রাষ্ট্রদূতকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার ইরানের হামলার পরে ছোট গ্রামটিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সূত্রগুলো জানিয়েছে, কোহ-ই-সবজের অন্যান্য এলাকায়ও বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্রের স্প্লিন্টারের আঘাতে করিম দাদের বাড়ির পাশের মসজিদে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

হামলায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মারকান বিভাগের কমিশনার সাঈদ আহমেদ উমরানি। তিনি বলেছেন, জরুরি চিকিৎসার জন্য আহত চারজনকে পাঞ্জগুর জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এদিকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরপরই জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখেছেন। পাশাপাশি স্থানীয় কর্মকর্তা ও বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন তাঁরা।

হামলার পর ওই এলাকাজুড়ে হেলিকপ্টার টহল দিতে দেখা গেছে। সম্ভবত প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সেগুলো কোথাও নামেনি।

মাকরান বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ইরানের আগ্রাসন শুধু ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি বলেন, ইরানের ভূখণ্ড থেকে মর্টারের অনেক গোলাও ছোড়া হয়েছে। সেসব গোলা বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরিত হয়েছে।

সরকারি ওই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, ঘটনার পরপরই সীমান্তজুড়ে তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত সীমান্তরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া সীমান্তে হাই অ্যালার্ট (সতর্ক অবস্থা) জারি করছে।

এদিকে সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা বলেছেন, ইরানের অভ্যন্তরে ড্রোন উড়তে দেখেছেন তাঁরা। তবে ওই এলাকায় নতুন করে কোনো হামলা কিংবা আকাশসীমা লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত