সৃষ্টিগতভাবে মানুষ দুর্বল। জীবনের প্রতিটি মুর্হুতে মানুষ আল্লাহ তায়ালার মুখাপেক্ষী। শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে খাবার-দাবার, দুই হাতে কাজ করার শক্তি, চিন্তাপ্রকাশের বাকশক্তি। নিরাপদ আশ্রয়, জীবনের সুখ-দুঃখ, সবকিছূর জন্য মানুষ আল্লাহ তায়ালার দয়া ও অনুগ্রহের মুখাপেক্ষী।
কিন্তু অধিকাংশ মানুষই আল্লাহ তায়ালার দয়া-অনুগ্রহ ও তার ওপর নিজের নির্ভরশীলতার কথা ভুলে যায়। তারা মনে করে নিজের চেষ্টা সাধনায় সবকিছু পেয়ে যাচ্ছে। মানুষের এমন ধারণা আল্লাহ তায়ালার প্রতি অকৃতজ্ঞতার অন্তর্ভু্ক্ত।
মানুষ একেবারে হালকা কোনো উপহার পেলেও উপহারদাতার প্রতি নিজের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে থাকে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার অগনিত নেয়ামতের মাঝে সবসময় ডুবে থেকেও আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করে না। মানুষের প্রতি আল্লাহ তায়ালার এমন বিপুল নেয়ামত কখনো গুণে শেষ করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা চেষ্টা করলেও কখনো আল্লাহর নেয়ামতসমূহের সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারবে না। আল্লাহ চির ক্ষমাশীল পরম করুণাময়।’- (সূরা আন-নাহল, আয়াত, ১৮)।
এরপরও অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। মানুষের অকৃজ্ঞ আচরণের অন্যতম কারণ হলো, অভিশপ্ত শয়তানের মানুষকের বিপথগামী করার প্রতিজ্ঞা। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তখন আমি তাদের কাছে আসবো, তাদের সামনে থেকে, পিছন থেকে, ডান থেকে, বাম থেকে। দেখবেন তাদের অধিকাংশই নাফরমান। তিনি (আল্লাহ) বলেন, দূর হ, তুই ধিকৃত ও বিতাড়িত জন। যারা (মানবজাতি) তোর অনুসরণ করে তাদের প্রত্যেককে ধরে ধরে জাহান্নামে ভরাট করবো আমি।’- (সূরা আল আরাফ, আয়াত ১৭-১৮)।
তবে শয়তানের প্ররোচনার মাঝেও মুমিন ব্যক্তিরা সবসময় সচেতন থাকেন। নিজের অপরাগতার কথা স্মরণ করে আল্লাহ তায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকেন তারা। আর যারা নফল ও শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে আল্লাহ তায়ালা প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায়ের বিষয়টি ভুলে যায় না, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহ তায়ালার বিশেষ পুরস্কার। এই কৃতজ্ঞ বান্দাদের নেয়ামত আল্লাহ তায়ালা বাড়িয়ে দেবেন কয়েক গুণ।
যারা সুস্বাস্থ্য ও সামর্থের জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আল্লাহ তাদের স্বাস্থ্য ও সামর্থ্য আরও উন্নত করে দেন। যারা জ্ঞান বা ধন-সম্পদের জন্য কৃতজ্ঞতা আদায় করে আল্লাহ তায়ালা তাদের জ্ঞান ও ধন-সম্পদ বাড়িয়ে দেন। এর কারণ হচ্ছে তারা আল্লাহ তায়ালার দানে সন্তুষ্ট, আর আল্লাহ তায়ালা যা দান করেছেন তাকে তারা নিজের জন্য যথেষ্ট মনে করেছেন। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,
‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন।’- (সূরা ইবরাহিম আয়াত, ৭)।
নেয়ামতের অকৃতজ্ঞতা আল্লাহ অত্যন্ত অপছন্দ করেন। যার জন্য তিনি কঠিন শাস্তির ধমক দিয়েছেন। এই জন্য নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বলেছেন যে, ‘অধিকাংশ মহিলারা স্বামীর অকৃতজ্ঞ হওয়ার কারণে জাহান্নামে যাবে।’- (মুসলিম)।