খুলনা ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মামুন মাহামুদ বলেন, ‘সন্ধ্যা থেকে আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি। তবে আমাদের সদস্য ও বন বিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। সোমবার ভোর ৫টা থেকে আবারও আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা হবে।’
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন লতিফের ছিলা এলাকায় লাগা আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনও পুড়ছে বিশ্ব ঐহিত্য সুন্দরবন।
এ অবস্থায় রোববার সন্ধ্যায় অগ্নিনির্বাপনের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। সোমবার ভোর ৫টা থেকে পুনরায় আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা হবে বলে জানান খুলনা ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মামুন মাহামুদ।
তিনি জানান, সুন্দরবনে লাগা আগুন একটি নির্দিষ্ট এরিয়ার মধ্যে রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আগুন জ্বলছে। কারণ বনের শুকনো পাতা পড়ে একটি মোটা আস্তরণের মতো তৈরি হয়েছে। ফলে পানি ছিটিয়ে নেভানোর পরও হঠাৎ আবার আগুন জ্বলে উঠছে।
মামুন মাহামুদ বলেন, ‘সন্ধ্যা থেকে আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি। তবে আমাদের সদস্য ও বন বিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। সোমবার ভোর ৫টা থেকে আবারও আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা হবে।’
আগুন নেভাতে কতটা সময় লাগতে পারে- এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি জানান, সেটা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে সোমবার এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
এদিকে রোববার সকালে সুন্দরবন বিভাগের চারটি অফিসের কর্মকর্তা ও বনরক্ষীসহ ফায়ার সার্ভিসের খুলনা, বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, শরণখোলা ও কচুয়ার পাঁচটি স্টেশনের সদস্য এবং নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, সুন্দরবন সুরক্ষায় টিমের সদস্য ও স্থানীয়রা একযোগে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেন।
দুপুরে সুন্দরবনের এই আগুন নিয়ন্ত্রণে এই প্রথম যুক্ত হয় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার। হ্যালিকপ্টার থেকে আগুন লাগা স্থানগুলোতে ফেলা হয় পানি।
আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুড়ছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন
এর আগেই বিশ্ব ঐতিহ্য এই সংরক্ষিত বনের বিভন্ন স্থানের প্রায় ১০ একর এলাকার ছোট-ছোট গাছপালাসহ লতাগুল্ম পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এ নিয়ে গত ২০ বছরে সুন্দরবনে ২৬টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৮৬ একর বন পুড়ে গেছে। দিনভর এই অগ্নিকাণ্ডের স্থান ঘুরে কোনো বন্যপ্রাণী মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়া রোবার সকালে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দে’র নেতৃত্বে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মোহম্মদ নুরুল করিম বন কর্মকর্তা, বনরক্ষী ও সুন্দরবন সুরক্ষায় টিমের সদস্যদের দিয়ে প্রথমেই আগুন লাগার স্থানগুলো ঘিরে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে লাইন অফ ফায়ার (নালা) কেটে দেয়ার ব্যবস্থা করেন।
দুই কিলোমিটার দূরে ভোলা নদী থেকে লাইন টেনে লাইন অফ ফায়ার নালায় পানি ভরে দেয়া হয়। উদ্দেশ্য, আগুন বনের অন্য স্থানগুলোতে যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুড়ছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন
এরপর ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি স্টেশনের সদস্যরা বনের বিভিন্ন স্থানে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। এ সময় নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সুন্দরবন সুরক্ষায় টিমের স্থানীয় সদস্যরা একযোগে আগুন নিয়ন্ত্রণে অংশ নেন। সম্মিলিত চেষ্টায় দুপুর ২টার দিকে আগুনের তীব্রতা কমতে থাকে।
অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মো. আমির হোসাইন চৌধুরী, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালিদ হোসেন ও পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান।
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহম্মদ নুরুল করিম জানান, কিভাবে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাঁদপাই রেঞ্জের কর্মকর্তা (এসিএফ) রানা দেবকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট পাওয়ার পর কিভাবে আগুন লেগেছে এবং বণ্যপ্রাণী ও গাছপালার কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তরিত জানানো হবে।